কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে পর্যটনের সংজ্ঞা বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের ফলে পর্যটনের পরিধি আরও ব্যাপকতা পেয়েছে, একইসঙ্গে এর বহুমাত্রিক ও বৈচিত্র্যময় অন্তর্ভুক্তি যুক্ত হয়ে পর্যটনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ‘পোস্টকোভিড-১৯ পর্যটন: বাংলাদেশের এসডিজি-স অর্জনের হাতিয়ার’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন- বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোজাম্মেল হোসেন, টুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মো. ইলিয়াস শরীফ, এফবিসিসিআইয়ের পর্যটনবিষয়ক ডিরেক্টর ইনচার্জ নাসির মজুমদার, টোয়াব সভাপতি শিবলুল আযম কোরেশী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এসডিএফ'র চেয়ারপারসন ও সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আব্দুস সামাদ। 

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জনের পথে রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বকে যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠলক্ষ্য অর্জন করতে হবে, তার মধ্যে ৩টিকে বলা হচ্ছে সরাসরিভাবে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। পরোক্ষভাবে সংযুক্ত আরও ১৩টি। কিন্তু দেশভেদে এই লক্ষ্যসংখ্যা ভিন্ন। গবেষণা বলছে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে এই সংখ্যা কমপক্ষে ৬টি। সুতরাং আগামী দিনে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যটনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য নিশ্চিত করবার জন্য কুশলী, কৌশলী এবং দূরদর্শী পথে অনিবার্যভাবে ছুটে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। উপরন্তু কোভিড-১৯ পরবর্তী পর্যটন পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একদিক থেকে সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক সঙ্গের হাতিয়ার রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- লেখক, গবেষক এবং ভ্রমণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, পর্যটনের মাধ্যমে সাফল্যলাভের সম্ভাবনাময় সফল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হওয়ার কারণ বহুবিধ। পর্যটন সম্ভাবনা বিবেচনায় বাংলাদেশকে বলা হয় ‘ইউনিক ডেল্টা অব সেভেন টিএ। এই সেভেন টিএ হচ্ছে নদী, সমুদ্র, পাহাড়, বন, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, ঋতু বৈচিত্র্য এবং আতিথেয়তা। অর্থাৎ কোনো স্থানে বা কোনো দেশে এই সেভেন টিএ-এর একটি যদি উপস্থিত থাকে পর্যটনের জন্য তাকে বলা হয় গুড, যদি দুইটি থাকে তাকে বলা হয় বেটার, আর যদি দুইয়ের অধিক থাকে তবে বলা হয় বেস্ট। সেই বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে বেস্ট। 

কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে জাপান, ইটালি, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, নেপাল, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের প্রচলিত মাস্টার ট্যুরিজম প্লানের বদলে তিন থেকে ১০ বছর মেয়াদি কোভিড-১৯ পরবর্তী ট্যুরিজম পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে এরইমধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটনে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এখনও করা হয়নি।

দুনিয়া জুড়ে নানা কাজেরই একটি ‘প্রারম্ভ’ থাকে। কিন্তু পর্যটনের কোনো ‘প্রারম্ভ’ নেই। এখানে শুরু করতে হয় ‘স্টার্ট উইথ নো বিগিনিং’ বা ‘প্রারম্ভহীন শুরু’। এই ‘প্রারম্ভ’হীন ‘শুরু’ করবার জন্য যে মেথড সফল হিসাবে পরীক্ষিত, প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত তাকে বলা হয় ‘উইন্ডো ড্রেসিং মেথড’।

প্রথাগত পদ্ধতিতে ‘প্রারম্ভ’ খুঁজতে গিয়ে পর্যটনের যথার্থ শুরুটা হয়নি বাংলাদেশে। ফলে বিশাল পর্যটন ভাণ্ডার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পর্যটন সাফল্য থেকে এখনও বঞ্চিত। কোভিড-১৯ পরবর্তী পর্যটন পরিস্থিতি পূর্বাভাস আমাদের জন্য নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা এনে দিয়েছে যা এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য পেনাল্টি শুট হিসেবে কাজ করবে।