
নাব্য সংকটে পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়া পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ-সমকাল
নাব্য সংকটে পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ছে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এসব জাহাজ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাহিদামতো চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে মারধরের শিকার হচ্ছে সংশ্নিষ্টরা।
গত সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌরুটে নাব্য সংকটের কারণে কয়েক দিন ধরে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাথর, কয়লা, গম, সারসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই এসব জাহাজ চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে এসে পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়ছে। পরে এখান থেকে আংশিক পণ্য খালাস করে ছোট কার্গো বা ট্রলারে বাঘাবাড়ী পাঠানো হচ্ছে। এরপর লোড কমিয়ে কার্গোগুলো বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। পণ্যবাহী প্রতিটি কার্গো জাহাজকে অন্তত এক সপ্তাহ আটকে থাকতে হয়। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একটি গ্রুপ ট্রলার নিয়ে গিয়ে আটকে থাকা জাহাজে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। এ ক্ষেত্রে তারা বিআইডব্লিউটিএর চ্যানেল চার্জের নামের রশিদ দিয়ে থাকে। গত রোববার অতিরিক্ত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ কার্গো নামের মালবোঝাই একটি জাহাজের চালক ইরশাদ আলীকে মারধর করে নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে তাঁর সহকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি আবার জাহাজে উঠতে সক্ষম হন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুস্ক মৌসুম শুরুর দিকে কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় নাব্য সংকট দেখা দেয়। যে কারণে প্রতি বছর এখানে আটকা পড়ে পণ্যবাহী জাহাজ।
চট্টগ্রাম থেকে পাবনার নগরবাড়ী ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা কার্গো জাহাজ এমভি হোসনে আরা-৩-এর সুকানি তজিবর সরদার জানান, তাঁদের জাহাজটি কয়লাবোঝাই করে এসে তিন দিন আগে (শুক্রবার) পদ্মা নদীর এ এলাকায় এসে আটকা পড়ে। এখানে অপেক্ষাকৃত ছোট ভলগেট জাহাজে আংশিক মাল খালাস করে তাঁদের জাহাজের ড্রাফট (জাহাজের তলদেশের পানির গভীরতা) কমিয়ে গন্তব্যে যাবে।
এমভি স্বপ্নতরী-২ কার্গো জাহাজের মাস্টার মাহফুজুর রহমান জানান, বিগত বছরেও পদ্মা নদীর এই এলাকায় জাহাজ আটকা পড়লে আংশিক মাল খালাস করে গন্তব্যে যেতেন। এর জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হতো না। এ বছর চ্যানেল চার্জের স্লিপ দিয়ে ইচ্ছামতো টাকা দাবি করা হচ্ছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের সে টাকা দিতেও হচ্ছে।
এমভি সাহারা-২ কার্গো জাহাজের মাস্টার মো. ইব্রাহিম জানান, তাঁরা আগেও এই নৌরুট দিয়ে চলাচল করেছেন। এর আগে এখানে তাঁরা এ ধরনের চাঁদাবাজির শিকার হননি। কথিত চ্যানেল চার্জের নামে অতিরিক্ত টাকা তাঁদের কাছে দাবি করা হচ্ছে। চাহিদামতো টাকা না দিলে তাঁদের মারধরসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
নগরবাড়ী নামের ভলগেট জাহাজের চালক ওমর ফারুক জানান, দৌলতদিয়ায় নতুন একটি গ্রুপ চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা আদায়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। তাদের কথামতো টাকা না দিলে তারা মারধর করে। তাদের ভয়ে নৌযান শ্রমিকরা উৎকণ্ঠায় থাকেন।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জে এম সিরাজুল কবির বলেন, পদ্মা-যমুনা নদী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিআইডব্লিউটিএ ইজারা দেওয়ায় চ্যানেল চার্জের নামে চাঁদাবাজির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া ইজারাদার ইজারা নিয়ে সাব ইজারাদার নিয়োগ করেছেন। যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। সাব ইজারাদার ইচ্ছামতো টাকা আদায় করছেন। তবে কাউকে শারীরিক নির্যাতন বা ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, নৌপথ সচল রাখতে ব্যয় নির্বাহের জন্য চ্যানেল চার্জ গ্রহণের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। জাহাজে মালের টনপ্রতি চার্জ নির্ধারিত। এর অতিরিক্ত টাকা আদায় অথবা জুলুম-নির্যাতন করা হলে ইজারা বাতিলসহ ইজারাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। ভুক্তভোগীরা সে বিষয়ে তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন