ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

বাঁশখালীর বাতিঘর ২০ বই নিয়ে শুরু করা গ্রন্থাগার

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস আজ

বাঁশখালীর বাতিঘর ২০ বই নিয়ে শুরু করা গ্রন্থাগার

চট্টগ্রামের উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে বই পড়ছে কয়েক শিক্ষার্থী সমকাল

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:২৪

একটি টেবিল, চারটি চেয়ার, একটি সেলফ আর মাত্র ২০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু। এর পর ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। মাঝে তিনবার সইতে হয়েছে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ আঘাত। তবে কোনো কিছুই থামাতে পারেনি আলোকচ্ছটা। ক্ষুদ্র সেই গণগ্রন্থাগারে এখন রয়েছে ৯ হাজার বইয়ের বিশাল ভান্ডার। শুধু বই পড়ে রক্ষণশীল একটি এলাকা হয়ে উঠেছে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৬৩ কিলোমিটার এবং বাঁশখালী উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষা গ্রন্থাগারটির নাম উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি। বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামীণ জনপদের গ্রন্থাগারটি এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে উপকূলের বাতিঘর হিসেবে।
‘অন্ধকারে আলোর প্রদীপ’ স্লোগানে ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল এ গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু। ২০১৭ সালে জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয় এটি। বর্তমানে তিন শতাধিক সদস্য এখান থেকে দেশ-বিদেশের লেখকদের বইয়ের স্বাদ নিতে পারছেন। যার মধ্যে শতাধিক নারী সদস্য। গ্রন্থাগারটি দেখভালও করেন তিনজন নারী। লাইব্রেরিটিতে রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়াও। চেয়ার, টেবিল, বইয়ের সেলফ আর দেয়ালগুলো সাজানো হয়েছে মনীষীদের উপদেশ-উদ্দীপনামূলক বাণী দিয়ে। বিকেল হলেই বইপড়ুয়াদের আনাগোনা আর কোলাহলে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এখানে। লাইব্রেরির বড় হলরুমে নিরিবিলি ও স্বাচ্ছন্দ্যে বই পড়া ছাড়াও সাহিত্য চর্চা ও আড্ডায় মেতে ওঠেন পাঠকরা।
গণগ্রন্থাগারটির ভান্ডারে রয়েছে ছোটগল্প, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, দর্শন, ইতিহাস, ধর্মীয়, মনোবিজ্ঞান, প্রবন্ধ গন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, ঐতিহ্য, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ,  ভাষাজ্ঞান, গবেষণা, অনুবাদ সাহিত্য, অর্থনীতি, বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশের কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও মনীষীদের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’। ফলে হাজারো শিক্ষার্থী খুব সহজে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে। বসে পড়ার পাশাপাশি ১৫ দিনের জন্য বাড়িতে বই নিয়ে যাওয়ার সুযোগও আছে। 
গ্রন্থাগারটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাঈফী আনোয়ারুল আজিম বলেন, একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরির রূপ পেয়েছে। ২০১৫ সালে গ্রন্থাগারটির নামে ২২ শতক জমি কিনে ভবন তৈরি করে স্থায়ী লাইব্রেরি গড়া হয়েছে। বাঁশখালীর চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণীকে বইমুখী করেছি।
লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক তাহমিনা আকতার বলেন, গত তিন বছর ধরে নিয়মিত এখানে বই পড়তে আসি। বই ধার নিয়ে বাড়িতে পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে আবার ফেরত দিই। কানিছ ফাতেমা নামে আরেক পাঠক বলেন, বই ছাড়াও নিয়মিত তিনটি সংবাদপত্র পড়ার সুযোগ পাই আমরা। ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নার্গিস সোলতানা চৌধুরী জানান, গ্রন্থাগারটি ইউনিয়নের গর্বের প্রতিষ্ঠান। গত ১৫ বছর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। কখনও ঘূর্ণিঝড়, কখনও বাতাসের তীব্র গতি সবকিছু ছন্নছাড়া করে দিয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। 
গ্রন্থাগারিক জান্নাতুল হুরি বলেন, ঝড়-তুফানের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছি। আমরা সাহস হারাই না।

আরও পড়ুন

×