মিলছে না পানি, ব্যয় বাড়ছে আবাদে
হরিণাকুণ্ডের সাত ব্রীজ এলাকায় প্রধান সেচ খালে জিকে প্রকল্পের পানি না আসায় শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে সমকাল
এম সাইফুজ্জামান তাজু, হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২২:৪৪
কৃষকের ক্ষেতে সেচ সুবিধার জন্য বাস্তবায়ন করা হয়েছিল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জিকে)। প্রতিবছর মৌসুমের শুরু থেকেই এর পানি পাওয়া যায়। তবে চলতি বোরো মৌসুমের এক মাস পেরিয়ে গেলেও মিলছে না পানি। এর কারণ হিসেবে পাম্প নষ্টের কথা বলছে পাউবো। এ সুযোগে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা পাম্প মালিকরা সেচের খরচ নিচ্ছেন বেশি। ফলে ব্যয় বাড়ছে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হাজারো কৃষকের। এবার খরচের টাকা ওঠা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
কৃষকরা জানান, এখনও জিকের পানির দেখা মেলেনি। সময়মতো ধান চাষের জন্য বাধ্য হয়ে সেচের জন্য বাড়তি টাকা দিচ্ছেন পাম্প মালিকদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভাষ্য, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তিনটি পাম্পের মধ্যেই দুটিই নষ্ট। ফলে ঝিনাইদহ ও মাগুরায় পানি সরবরাহ বন্ধ আছে। আব্দুল মালেক ঝন্টু নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা বলছেন, এভাবে ভরা মৌসুমে যদি পানি সরবরাহ না করে, তাহলে ফলন কম হবে। এতে কৃষক লোকসানে পড়বেন।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৯ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মধ্য জানুয়ারিতে মৌসুম শুরুর পর ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ২৭ হাজার ৪৮০ জন কৃষক আবাদে যুক্ত। এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কৃষক চারা রোপণ করেছেন। অন্যরা ক্ষেত প্রস্তুত করছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সেচের পানি না পাওয়ায় বিঘাপ্রতি জমিতে পাম্প ও শ্যালো মেশিনের মালিকরা ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিচ্ছেন জানিয়ে কৃষকদের ভাষ্য, শ্যালো মেশিনের জন্য আলাদা তেল খরচ দিতে হয়। এতে মৌসুমে আরও ৭-৮ হাজার টাকা ব্যয় হবে। শুধু পানির জন্যই বিঘাপ্রতি ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে চারা, সার, কীটনাশকসহ শ্রমিকের ব্যয়। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদনে ব্যয় হবে ২০-২২ হাজার টাকা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠে ঘুরে আবাদে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে কৃষকের। হরিণাকুণ্ডু-জোড়াপুকুরিয়া মাঠে ক্ষেতের পরিচর্যা করছিলেন খোকন আলীসহ কয়েকজন। খোকন জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করছেন। জিকের পানি না পেয়ে ব্যক্তি মালিকানার পাম্প থেকে সেচ দিচ্ছেন। এতে বিঘাপ্রতি ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। জিকের পানি নালার মাধ্যমে নিলে বিঘায় ব্যয় হয় মাত্র ৩০০ টাকা। ফলনও ভালো হয়। কিন্তু এ পানি না পাওয়ায় তিনি এবার উৎপাদন ব্যয় ওঠা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
সেচ খরচ বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম নামে এক পাম্প মালিক বলেন, রাতদিন শ্যালো মেশিন চলে। পালাক্রমে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মজুরিসহ কিছু খরচ আছে। তিন থেকে চার মাস পর ধান তুলে বিক্রি করে টাকা দেন কৃষক। পানি বিক্রি করে যে টাকা আসে, তাতে সামান্য লাভ থাকে বলে দাবি তাঁর।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মৌসুমে উপজেলার হাজার হাজার কৃষক ধান, পাটসহ নানা ধরনের সবজি আবাদের জন্য সেচ দেন গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের পানি দিয়েছে। তবে দুটি পাম্প নষ্ট থাকায় এবার শুধু কুষ্টিয়া অঞ্চলে একটি পাম্পের পানি দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঝিনাইদহ এবং মাগুরার কৃষকরা এ পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার সাত ব্রিজ এলাকায় প্রধান খালটি আলমডাঙ্গা সেচ খাল হিসেবে পরিচিত। পাউবো ভেড়ামারার পাম্প থেকে এ খালে পানি সরবরাহ করে। সেখান থেকে পাঁচটি শাখা খালের মাধ্যমে কৃষকের জমিতে সেচের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। তবে এবার পানি না দেওয়ায় খাঁ খাঁ করছে সেচ খালগুলো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহীন ইসলাম বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত সেচের পানি পাওয়া যাবে বলে আশা তাঁর। আর নষ্ট পাম্প দুটি মেরামতের চেষ্টা চলছে জানিয়ে ঝিনাইদহ পাউবোর উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব বলছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।