সাড়ে ১১শ মণ পুঁটি শুঁটকি উৎপাদন, যাচ্ছে ভারতেও

.
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২২:৪৫
নড়াইলের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা ভীম বিশ্বাস (৪০)। চার বছর আগেও তিনি ছিলেন বেকার। বর্তমানে বিলের দেশি পুঁটির শুঁটকি তৈরি করে ভাগ্য ফিরেছে তাঁর। তিনি বলছিলেন, শুঁটকির জন্য পুঁটি মাছ বাছাই করা হয় সতর্কতার সঙ্গে। নষ্ট, পচা বা আংশিক পচা মাছ ব্যবহার করা যায় না। এ বছর একটি বিল থেকেই প্রায় ২০ টন মাছের শুঁটকি তৈরি হয়েছে। এগুলো কেনেন কয়েক জেলার ব্যবসায়ীরা।
জেলার সোলুয়া ও মির্জাপুর বিলের খালপাড়ে গড়ে উঠেছে দেশি পুঁটির শুঁটকিপল্লি। প্রতিদিন বিভিন্ন বিল ও খাল থেকে মাছ এনে বাঁশের মাচা বা চাতালে রোদে শুকানো হচ্ছে। এসব শুঁটকি বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে। কোনো কেমিক্যাল ছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে এ শুঁটকি উৎপাদনে খরচ কম। এতে ব্যবসায়ীরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় এবার ১ হাজার ১৫০ মণ পুঁটি মাছের শুঁটকি তৈরি হয়েছে। এ মাছ থেকে আয় হয়েছে অন্তত আড়াই কোটি টাকা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬০ টন শুঁটকি বিক্রি হয়েছে। এর দাম ছিল অন্তত ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এবারও এখন পর্যন্ত ৪৬ টনের বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের সলুয়ার বিল এবং সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বিলে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ এ ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। মৌসুমি এ কাজের সঙ্গে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। শুঁটকি তৈরির সঙ্গে জড়িতরা জেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা মণ দরে মাছ কেনেন। পরে ভালোভাবে ধুয়ে বাঁশের মাচা ও চাতালে রোদে শুকানো হয়।
৭ থেকে ১০ দিন শুকিয়ে বস্তায় ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় শুঁটকি। পরে এসব শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। বাংলা কার্তিক মাস থেকে শুরু করে সাড়ে চার মাস এ ব্যবসা চলে। ব্যবসায়ী রাজ কুমারের ভাষ্য, মজাদার শুঁটকি তৈরির জন্য সংগ্রহ করতে হয় টাটকা মাছ। এরপর বাছাই করে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে দ্রুত শুকাতে হয়। এসব মাছের গ্রেডিংও হচ্ছে। বড় শুঁটকি হলে দাম বেশি পাওয়া যায়।
দেশি পুঁটি মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন কল্যাণখালী গ্রামের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ও অলোক মালো। তারা জানান, খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীরা এসে মাছ কিনে নিয়ে যান। কাঁচা মাছ প্রতি মণ ১ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকায় কেনেন। শুকিয়ে গ্রেড অনুযায়ী ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।
মাইজপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শলুয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সোলুয়া ও আড়ংগাছা বিলে প্রাকৃতিকভাবে পুঁটি মাছের ব্যাপক উৎপাদন হয়। এর সুবাদে শুঁটকিপল্লি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক ব্যবসায়ী এগুলো কিনে নিয়ে যান। সিংগাশোলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিটু মোল্যার ভাষ্য, মির্জাপুর গ্রামের শুঁটকির সফলতা বেকার যুবকদের আগ্রহী করে তুলবে। ক্ষুদ্র শুঁটকি ব্যবসায়ীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি যুবসমাজের বেকারত্ব থেকে মুক্তি মিলছে।
নড়াইল মাছের উদ্বৃত্ত জেলা জানিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, জেলার কয়েকটি জায়গায় প্রতিবছর দেশি পুঁটির শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। এ মাছ থেকে আয় হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। জেলেরা এসব মাছ ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া মোকামে উপযুক্ত দামে বিক্রি করেন। সেখান থেকে ভারতে রপ্তানি হয়। বিল ও জলাশয় কমে যাওয়া এবং পাট পচানোর জন্য দেশি মাছের উৎপাদন কমেছে। এরপরও চেষ্টা চলছে মাছের উৎপাদন বাড়াতে। এ জন্য কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে।