সেতুর আক্ষেপ ১৫ গ্রামবাসীর

কমলগঞ্জের রামপুর এলাকায় ধলাই নদীতে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ সমকাল
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২২:৪৬
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ধলাই নদীতে কোনো সেতু নেই। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নদীর দুই পারের অন্তত ১৫ গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলার রামপুর-করিমপুর পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার করিমপুর গ্রাম ও ৫ নম্বর কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ধলাই নদী। নদী পাড়ি দিতে স্থানীয়দের একমাত্র অবলম্বন রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন একটি বাঁশের সাঁকো। উপজেলা সদরে যাতায়াতে এ সাঁকো ব্যবহার ছাড়া বিকল্প নেই বললেই চলে। এ পথে যাতায়াত করেন সরইবাড়ি, বাদেউবাহাটা, ছতিয়া, চৈতন্যগঞ্জ নারায়ণপুর, রামপুর, রামপাশা, ছাইয়া খালিসহ আশপাশের গ্রামের ২০ হাজার বাসিন্দা। প্রতিদিন নদীর দুই পারের হাজারো মানুষকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছেন। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবছর খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। সেই সাঁকো ব্যবহার করে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হন। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি পানিতে তলিয়ে যায়। তখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নিরাপত্তাহীন খেয়া। বিকল্প পথে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে হলে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরতে হয়।
আলাপকালে স্থানীয় নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস জানায়, বৃষ্টির সময় সাঁকো পারাপারে বিপাকে পড়তে হয়। তখন একসঙ্গে সাঁকো ধরা, বইখাতা ও ছাতা ধরা দুরূহ ব্যাপার।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুমিনা জানায়, সাঁকোটি পারাপার হতে গিয়ে অনেকেরই বই-খাতা পানিতে পড়ে ভিজে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক আবদুল মনাফ বলেন, সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে প্রতিবছরই অনেক লোক আহত হন। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান জানান, রামপুর ও করিমপুরের সঙ্গে ধলাই নদীর ওপরে একটি সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে অনেক আগেই এলজিইডির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ ধলাই নদীর ওপর শিগগিরই সেতুটি নির্মাণে পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি আশাবাদী।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, করিমপুরে ধলাই নদীর ওপরে যাতায়াত ব্যবস্থা একমাত্র সাঁকো দিয়ে লোকজন চলাচল করতে হয়। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং সেই সাঁকো গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও যাতায়াত করছেন। এই ব্রিজ পার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১৪-১৫টি গ্রামের লোকজন আসা-যাওয়া করেন। জরুরি ভিত্তিতে ধলাই নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এলজিইডির চলমান একটি প্রকল্প আছে উপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন গ্রাম সড়ক। এটি ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের প্রকল্প। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০২২ সালে ধলাই নদীতে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সেটা অনুমোদন হয়ে বলে তিনি আশাবাদী।