রাজশাহীতে ২ বোনের মৃত্যু নিপাহ ভাইরাসে নয়

ফাইল ছবি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৯:১৩ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৯:১৮
বরই খেয়ে জ্বর, বমি ও শরীরে দেখা দেয় র্যাস। এরপর একে একে মারা যায় দুই বোন। একজন হাসপাতালে আনার আগেই, অপরজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শুধু তাই নয়, দুই মেয়েকে হারানো মা-বাবাও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে দুই বোনের মৃত্যু নিপাহ ভাইরাসে হয়নি বলে জানানো হয়েছে। অজানা ভাইরাস শনাক্তে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে জানান রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মেদ।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, হাসপাতালে মারা যাওয়া মাশিয়া ও তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। তাদের নমুনা পরীক্ষায় নিপাহ ভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। অন্য কোনো ভাইরাস বা রোগে তারা আক্রান্ত হতে পারে। তা জানার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর পরীক্ষা করছে। সেসব প্রতিবেদন এলে জানা যাবে। তবে তাদের নিপাহ ভাইরাস হয়নি এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, দুই শিশুর বাবা ভালো আছেন। তবে তাদের মা এখনও জ্বরে আক্রান্ত। এটা অন্য কারণেও হতে পারে।
এদিকে দুই বোনের মৃত্যুতে পুরো গ্রামজুড়েই চলছে শোক। তাদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে বাড়ির আঙ্গিনায়।
নিহত দুই শিশুর নাম মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাশিয়া (৫)। তাদের বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।
রোববার বিকেলে মারা যাওয়া দুই বোনের দাদা আমীর হোসেন বলেন, ‘সোমবার ভোরে কাজের বুয়া ১০-১২টা বরই এনে দিয়েছিল। তখন ছোট নাতি মারিশা এসে আমাকে বলেছে দাদু দেখ বরই। আমি বলেছি, খায়োনা দাদু, ধুইছো? আগে মাকে দেখাও। এর দুদিন পর বুধবার ছোট নাতি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার জ্বর, বমি ও শরীরে র্যাস ছিল। ওই দিন হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সে মারা যায়।’
তাদের চাচাতো দাদা আবুল হোসেন বলেন, ‘বুধবার মঞ্জুরের ছোট মেয়ে মারা যায়। ওই রাতেই তাকে দাফন করা হয়। শুক্রবার তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখি, বড় মেয়ে বমি করেছে। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে বলি। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার এ বাচ্চাটিও মারা যায়।’
শিশুদের মা পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া (গৃহকর্মী) কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। পরদিন বুধবার সকাল ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশা জ্বরে আক্রান্ত হয়। বারবার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে নেন। পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও একই লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।