১৪ স্লুইসগেট এখন গলার কাঁটা

ছয় বছর আগে ভেঙে গেছে ইন্দুরকানীতে বলেশ্বর নদের তীরবর্তী ভাড়ানি খালের ওপর স্লুইসগেটটি সমকাল
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:০৬
ফসল আর জলবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পেতে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে করা হয় স্লুইসগেট। কিন্তু জনস্বার্থে করা এ স্লুইসগেট এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ কয়েকটির কপাট ভেঙে গেছে। কতগুলো ওঠানো-নামানো করা যায় না। ফলে ফসলের জন্য পানি ধরে রাখা ও পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ। সরেজমিন এ চিত্র দেখা গেছে ইন্দুরকানীর কঁচা ও বলেশ্বর নদের বেড়িবাঁধসংলগ্ন ১৪টি স্লুইসগেটের।
ইন্দুরকানী গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান জানান, স্লুইসগেটের কপাট ভেঙে যাওয়ায় পানির তোড়ে রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির।
বলেশ্বর নদের তীরবর্তী ইন্দুরকানী গ্রামের ভাড়ানী খালের স্লুইসগেট ভেঙে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। পানির তোড়ে খালসংলগ্ন তিন কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক বিলীনের পথে। খালের গভীরতা আট থেকে ৯ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় পাড় ভেঙে যাচ্ছে। সদর ইউনিয়নের কঁচা নদের তীরবর্তী কালাইয়া ও ইন্দুরকানী গ্রামের চারটি স্লুইসগেটেরও প্রিতটির কপাট ভেঙে গেছে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে পানি ফসলের মাঠে প্রবেশ করে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয় এ এলাকায়। বালিপাড়া ও চণ্ডিপুর ইউনিয়নের ছয়টি স্লুইসগেটও অকেজো। কপাট না থাকায় এ এলাকার খালসংলগ্ন সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। একই অবস্থা পাড়েরহাট ইউনিয়নের খালসংলগ্ন তিনটি স্লুইসগেটের। এভাবে বছরের পর বছর ধরে বেহাল পড়ে আছে স্লুইসগেটগুলো। সংস্কারের কথা বললেই বরাদ্দ নেই বলে দায় সারছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিন উত্তর ইন্দুরকানী গ্রামের বলেশ্বর নদসংলগ্ন ভাড়ানি খালের ওপর থাকা স্লুইসগেটের কপাট নেই। একপাশে মাটির বাঁধ থাকলেও পূর্বপাশ ফাঁকা। এ অংশে এমনভাবে বাঁধ ভেঙেছে যে, নৌকা বা ট্রলার চলাচলেও কোনো বাধা পাচ্ছে না। এরই মধ্যে খালটির দুই পাড় ভেঙে বেশ কিছু অংশ খালেই বিলীন হয়েছে। ছয় বছর ধরে ভাঙন চলতে থাকলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।
খোলপটুয়া গ্রামের মো. জাকির হোসেন জানান, নদসংলগ্ন বেশ কয়েকটি খালে থাকা স্লুইসগেট নষ্ট। সংস্কার না করায় সেগুলো কোনো কাজেই আসছে না। দ্রুত স্লুইসগেট মেরামত করা না হলে চাষাবাদে বিপর্যয় নেমে আসবে
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম তালুকদার বলেন, কচা ও বলেশ্বর নদের তীরবর্তী স্লুইসগেটগুলো মেরামত না করায় পানির চাপে গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাউবো কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
চণ্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু জানান, স্লুইসগেটের কারণে বর্ষায় ইউনিয়নের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হন। তাই বর্ষার আগেই কঁচা নদের তীরবর্তী বিধ্বস্ত স্লুইসগেটগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। না হলে বাড়িঘর ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, কঁচা ও বলেশ্বর নদের বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন বিভিন্ন খালের বিধ্বস্ত স্লুইসগেটগুলো নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুততম সময়ে বরাদ্দ পাওয়া যাবে।