কক্সবাজারের ন্যাড়া পাহাড় সবুজায়নের উদ্যোগ

.
ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:০২
হারানো বন ও বন্যপ্রাণী ফিরে পেতে কক্সবাজারে ন্যাড়া পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করছে সরকার। এতে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে অনেক বন। বনজ সম্পদ রক্ষায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বন বিভাগ।
প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু ও সদর উপজেলার দুই হাজার একর ন্যাড়া পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। ৩৫ প্রজাতির চারার মধ্যে রয়েছে হরীতকী, আমলকী, গয়রা, গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, বৈলাম, সিভিট, জাম, চাপাতুল, কৃষ্ণচূড়া প্রভৃতি। এ ছাড়া বননির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৬ হাজার ৭৭৩ জনকে ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে ৫৭টি সংগঠনকে ২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৩ টাকা দিচ্ছে বন বিভাগ। ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের’ আওতায় এসব কাজ চলছে।
কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকার ন্যাড়া পাহাড়ের অধিকাংশে এরই মধ্যে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা। বাকি সব পাহাড়ে চারা রোপণ শেষ হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। স্থানীয়রা জানান, এসব পাহাড় বছর দশেক আগেও শতবর্ষী গর্জন গাছে ভরপুর ছিল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিরানভূমিতে সবুজায়নের এই প্রকল্প পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বড় অবদান রাখবে। বুনো হাতি নতুন করে আশ্রয়স্থল ফিরে পাবে। তবে বিরানভূমিতে বনায়ন করে বনকর্মীদের বসে থাকলে চলবে না, বনাঞ্চল রক্ষায় পাহারা বসাতে হবে। তা না হলে বনাঞ্চল আবার উজাড় হয়ে যাবে।’
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বনজ সম্পদের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি স্থানীয়দের নিয়ে কমিউনিটি প্যাট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) গঠন করে সহব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ অভয়ারণ্য রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। সিপিজির মাধ্যমে বন পাহারা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিকল্প উপার্জনের উপকরণও দিচ্ছে বন বিভাগ।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার সমকালকে বলেন, ‘সুরক্ষা দেওয়া হলে বন নিজেই তৈরি হয়। তাই উজাড় হওয়া বনে নতুন করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি সব বনকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ সহব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে বেশি ফল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর। এতে ভালো ফল মিলছে।’ ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে
কয়েক বছরের মধ্যে কক্সবাজারে আর ন্যাড়া পাহাড় দেখা যাবে না।’