ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

তিস্তার নাব্য সংকটে বন্ধ সাত নৌ রুট

তিস্তার নাব্য সংকটে বন্ধ সাত নৌ রুট

রাজারহাটের বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তা নদীতে চর পড়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ সমকাল

আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪ | ২৩:২০ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ | ২৩:২৩

এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা নাব্য হারিয়ে মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। এতে রাজারহাটের স্থানীয় পর্যায়ের সাতটি নৌ রুট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নদী পারাপারে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। স্থলপথ দিয়ে দীর্ঘ সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে তাদের। এতে সময়ের অপচয় এবং ব্যয় বেড়েছে নৌপথে চলাচলকারী মানুষের। পানিবিহীন নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় বালুচর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাব্য কমায় নদীর পানিপ্রবাহ মাঝ নদীতে চলে গেছে। অনেক স্থানে পানি নেই। এতে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ ঘাট থেকে চর বিদ্যানন্দ, ডাংরারহাট ঘাট থেকে চর বিদ্যানন্দ, কালীরমেলা থেকে পাড়ামৌলা ঘাট, বুড়িরহাট থেকে ঢুষমারার চর, তিস্তা থেকে থেতরাই ঘাট, ঠুটাপাইকর থেকে তিস্তা ঘাট এবং সরিষাবাড়ি থেকে মাঝের চর ঘাট পর্যন্ত নৌ রুট বন্ধ হয়ে আছে। দু-একটি জায়গায় নদীর জলাবদ্ধ স্থানে এখনও নৌকা চললেও তা অনিয়মিত। এসব স্থানে পানি পেরিয়ে হাঁটা পথে অন্যান্য চর বা ক্ষেত-খামারে যান স্থানীয়রা।
উপজেলা সদরে চাকরি করেন চর বিদ্যানন্দ গ্রামের মাসুদ রানা। তিনি বলছিলেন, নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ায় পার্শ্ববর্তী কাউনিয়া উপজেলা দিয়ে প্রায় ২২-২৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে রাজারহাট যেতে হয় তাঁর। তৈয়ব খাঁ গ্রামের কৃষক মজিবর রহমানের ভাষ্য, চরের ফসলি জমিতে চাষাবাদ করছেন তারা। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ঘুরে সেখানে যাওয়া-আসা করতে হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গায় তিস্তা নদীর শত শত হেক্টর জমিতে বালুর স্তর পড়েছে। নৌ রুটগুলো বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে নদীপাড়ের মানুষদের। তারা বলছেন, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, কৃষক ও শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে স্থলভাগে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ফলে বাড়তি সময় লাগার পাশাপাশি ব্যয় বেড়েছে। অনেক স্থানে মানুষ হেঁটে হাঁটুজল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যান।
নাব্য হারিয়ে তিস্তা নদীতে চর জেগে ওঠায় অধিকাংশ স্থানে ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকরা। এতে চরগুলোয় এখন সবুজের সমারোহ। চাষাবাদ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, গম, বাদাম, পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, তিল, তিসি, কাউনসহ নানা ধরনের ফসল। উপজেলায় চরের ১ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমির মধ্যে ১ হাজার ৪০০ হেক্টর চাষাবাদের আওতায় এসেছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বেগম। তিনি বলেন, কৃষকদের প্রণোদনা, পুনর্বাসন ও কৃষিবিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চরের কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নুড়িপাথর, কাঁকরযুক্ত বালি ও মাটি বয়ে আসায় দ্রুত নদীর তলদেশ ভরাটও হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, অতিরিক্ত বালু ও কাঁকরযুক্ত মাটির স্তরে আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ে তোলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় নাব্য হারিয়ে ফেলেছে তিস্তা নদী।
উপজেলার বুড়িরহাট গ্রামের সিরাজুলের (৫৭) ভাষ্য, এক সময় চরগুলোয় কোনো চাষাবাদ হতো না। এখন রকমারি ফসলের আবাদ হচ্ছে। চতুরা মৌজার মিলন মিয়া ও ডাংরারহাট পাড়ামৌলা গ্রামের হাসান আলীসহ স্থানীয়রা জানান, নৌকায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যেই বালুচরে আটকে যায়। এ কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ধরলায় ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও তিস্তায় কোনো প্রকল্প বা বরাদ্দ নেই বলে জানান কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়েও নতুন কোনো তথ্য নেই।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×