২০০ একর প্যারাবন দখল করে চিংড়ি ঘের
কক্সবাজারের পোকখালীতে প্যারাবন কেটে গড়ে তোলা চিংড়ি ঘেরের পাড় সমকাল
ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪ | ২৩:২৬
কক্সবাজারের পোকখালীতে প্রায় ২০০ একর প্যারাবন দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে চিংড়ি ঘের। ঘের তৈরিতে কাটা হচ্ছে বাইন ও কেওড়া গাছ। উপকূলীয় বন বিভাগের এ জমি দখল করে এক সপ্তাহ ধরে বাঁধ নির্মাণকাজ চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
বন নিধনযজ্ঞের এমন খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও বন বিভাগের একটি দল। নেতৃত্ব দেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা।
বন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িতরা হলেন– স্থানীয় হেলাল উদ্দিন, আবু বক্কর, সাইদুল হক, তফুর আলম, নাছির আহমেদ, সাইদ, সিরাজ আবদুল্লাহ, মোস্তাক, হারুন। তাদের মধ্যে সাইদ, মোস্তফা ও হারুনের বিরুদ্ধে বন বিভাগ মামলা করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্যারাবন ধ্বংসের সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল আমিন বলেন, পরিদর্শন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এখনও প্রতিবেদন দেয়নি। প্রতিবেদন হাতে এলে বিস্তারিত জানা যাবে। পরিবেশ ধ্বংসকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান এ কর্মকর্তা।
মহেশখালী গোরাকঘাটা রেঞ্জের অধীনে চৌফলদণ্ডী বিট অফিসের আওতায় পোকখালী ৬ নম্বর স্লুইসগেটের সামনে হান্নান মিয়ার ঘোনা ঘের। এর পশ্চিমে প্রায় ২০০ একর জায়গা দখল করে বাঁধ দিয়ে চতুর্দিকে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সন্ত্রাসী দিয়ে চারপাশে পাহারা বসিয়ে বনে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আবাসস্থল হারাচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে আশ্রয় নেওয়া নানান প্রজাতির প্রাণী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলার সাহস
করেন না। প্রশাসনকে জানালে ভূমিদস্যুদের পক্ষ থেকে এলাকাছাড়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্যে ধ্বংসের এ যজ্ঞ দেখে মনে হচ্ছে, বনের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। যারাই এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
পোকখালী বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্যারাবন দখল করে চিংড়ি ঘের তৈরির বিষয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে তিনজনকে আসামি করে একটি মামলাও করা হয়েছে। এর পর বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে ওই জায়গায় কোনো গাছ কাটা হয়েছে– এ রকম চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।