ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

.

মামুন রেজা, খুলনা

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ০০:০৬

খুলনায় ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। বাগদা ও গলদা চিংড়ির তুলনায় হেক্টরপ্রতি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয় কয়েক গুণ। দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে নতুন প্রজাতির এ চিংড়ি। দেশে নতুন প্রজাতির এ চিংড়ি চাষ নিয়ে সম্ভাবনা দেখছেন চাষি, রপ্তানিকারক ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ২০২১ ও ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষ হয়। ২০২১ সালে পাইকগাছা উপজেলায় এবং ২০২২ সালে পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও কয়রায় ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ হয়। দুই বছরে ১ দশমিক ৬১ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলক চাষে ১৩ দশমিক ৮৯৬ টন ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার ৬১২ কেজি চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করা হয়, যার মূল্য ৮৮ হাজার ৮২৫ ইউএস ডলার। বাকি চিংড়ি দেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে।

দুই বছর পরীক্ষামূলক চাষের পর মৎস্য অধিদপ্তর বাণিজ্যিকভাবে চাষের অনুমোদন দেয় ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ। বর্তমানে খুলনার ১৫ হেক্টর জমিতে ৫ জন চাষি ভেনামি চিংড়ি চাষ করছেন। এতে উৎপাদন হয়েছে ৭৫ টন। তবে দেশের বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় ওই বছর আর চাষিরা বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি করেননি। চলতি বছরের শুরুতে দাকোপ উপজেলায় চারটি প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামি চিংড়ি চাষের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

চাষিরা জানান, প্রতি হেক্টর ঘেরে বছরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয় সাড়ে ৩ টন আর গলদা চিংড়ি মাত্র ৬০০ কেজি। অন্যদিকে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয় প্রায় ২০ টন। বাগদা চিংড়ি চাষে সময় লাগে ৫ মাস ও গলদায় ৭/৮ মাস। আর ভেনামি চিংড়ি বিক্রির উপযুক্ত হয় মাত্র ৩ মাসে। অর্থাৎ একই ঘের বা পুকুরে বছরে অন্তত তিনবার ভেনামি চিংড়ি চাষ করা যায়।
বটিয়াঘাটা উপজেলার শৈলমারী গ্রামে প্রায় ৫ একর জমির পাঁচটি পুকুরে চলতি বছর ভেনামি চিংড়ি চাষ করে এমইউসি ফুডস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তপন বিশ্বাস জানান, প্রতি একরে গড়ে ৪ টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। ভেনামি উচ্চ ফলনশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল চিংড়ি। বাগদা চিংড়ি বিক্রয়যোগ্য হতে ৫-৬ মাস সময় লাগে আর ভেনামি চিংড়ি ৩ মাসেই বিক্রয়যোগ্য হয়। বাগদা ও গলদা চিংড়ি প্রতি বর্গমিটারে ১২ থেকে ১৫টি চাষ করা যায়, সেখানে পানির উচ্চতা ৬ ফুট থাকলে ভেনামি চিংড়ি ৬০-৭০টি চাষ করা যায়। 

তিনি বলেন, একই ঘের বা জমিতে অন্য চিংড়ির তুলনায় ভেনামি উৎপাদন হয় অনেক বেশি। প্রতি একরে সর্বোচ্চ ৫ টন চিংড়িও উৎপাদন হয়। তারা একবার চিংড়ি রপ্তানি করেছেন। দেশের বাজারেও ভালো দাম পাওয়া যায়। সে কারণে আর রপ্তানি না করে স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৭০০ টাকায়। চলতি বছর আবার রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। 
ভেনামি চিংড়ি চাষের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা জানান, এ চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় মারা যায় কম। চিংড়ির বেশির ভাগ পোনা, খাবার ও ওষুধ বিদেশ থেকে আনতে হয়। দেশে উৎপাদন করা গেলে চাষের ব্যয় আরও কম হতো।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সাবেক সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, এই চিংড়ির উৎপাদন বাড়লে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়বে। সেই সঙ্গে রপ্তানিও বাড়ানো যাবে। অল্প জমিতে অধিক ঘনত্বে ভেনামি চাষ করা যায়। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম হয়। কম দামে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। তাই ভেনামি চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করা দরকার।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, প্রতি হেক্টরে ভেনামি চিংড়ি চাষে ব্যয় হয় ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর আয় হয় ৪৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ লাভ হয় প্রায় ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানির বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি। 
তিনি জানান, চিংড়ির পোনা, খাবার এবং ওষুধ ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হতো। তবে ভেনামি চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য খুলনার একটি হ্যাচারিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খাবার ও ওষুধ এখন দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। খুলনায় এ পর্যন্ত ভেনামি চিংড়ি চাষে কোনো রোগবালাই ধরা পড়েনি।
 

আরও পড়ুন

×