মাদ্রাসার প্রাচীরে অবরুদ্ধ পরিবার

রূপগঞ্জের ভোলাবো ইউনিয়নে দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসার মূল ফটক সমকাল
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ০০:১২
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষকের পরিবারের চলাচলের রাস্তা দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের চারিতালুক এলাকার দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসার বিরুদ্ধে
এমন অভিযোগ করেছেন স্কুলশিক্ষক মহসিন মিয়া ও তাঁর পরিবার।
এলাকাবাসী জানান, ভোলাবোর চারিতালুক দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি বহু আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও ৭০-এর দশকে এ জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। সে সময় জায়গাটি এলাকাবাসীর উন্মুক্ত খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
২০১৪ সালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে পাকা বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করলে শুরু হয় এলাকার মানুষের ভোগান্তি। চারিতালুক
মৌজার কৃষকরা মাদ্রাসার পশ্চিমে বপন করা ফসলাদি নিয়ে পাকা রাস্তায় উঠতে পারছিলেন না। তারা বহু পথ ঘুরে তাদের ফসল বাড়িতে
আনতে শুরু করেন। এ দেয়াল নির্মাণের কারণে সম্পূর্ণ অবরূদ্ধ হয়ে পড়েন ভোলাবো
গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক মহসিন মিয়া ও তাঁর পরিবার। পরে তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অনুনয় করে ছোট একটি পকেট গেট রাখেন বাড়িতে যাতায়তের জন্য। তারা সে রাস্তা ধরে মাদ্রাসা মাঠ পেরিয়ে দ্বিতীয় বাধার মুখে পড়েন মাদ্রাসার প্রধান ফটকে এসে। এ গেটটি রাত-দিনের বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে। দারোয়ানকে অনুরোধ করে তালা খুলে তবেই যাতায়াত করতে পারেন তারা।
শিক্ষক মহসিন মিয়া জানান, এমন মানবেতর জীবন অন্য কোনো মানুষের জীবনে আছে কিনা, তাঁর জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন মানুষকেও ঘর করে দিচ্ছেন আর তিনি একটু উন্মুক্ত রাস্তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ১০ বছর ধরে ছোটাছুটি করেও পাচ্ছেন না।
মহসিন মিয়ার ছেলে আরিফ আহমেদ বলেন, মাদ্রাসাটি ভোলাবো মৌজায় আর তাদের বাড়িটি মোচারতালুক মৌজায়। দুই মৌজার মাঝখানে ১০ ফুট জায়গা আছে। যেটা দখল করে মাদ্রাসার
দেয়াল তোলা হয়েছে। এই ১০ ফুট দখল ছেড়ে দিলে তারা চলাচলের রাস্তা পান। গত ১০ বছর নিজের বাড়িতে থেকেও মনে হচ্ছে তারা জেলখানায় বসবাস করছেন।
সম্প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শিক্ষকরা। অনুমতি ছাড়া মাদ্রাসায় প্রবেশ করার জন্য কৈফিয়ত চান তারা।
এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা ইকবাল হাছান বলেন, তারা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই গেটে তালা দিয়ে রাখেন। তবে মহসিন মিয়ার যাতায়াতের জন্য অনুমতি দেওয়া আছে।
মাদ্রাসার সভাপতি হাসান আশকারী জানান, এখানে মাদ্রাসার ছাড়া অন্য কোনো জমি তাঁর জানামতে নেই। এর পরও তারা মহসিন মিয়ার চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের চলাচলের জন্য একটি পকেট গেট রেখেছেন। মাদ্রাসার উত্তর দিক দিয়ে কৃষকদের চলাচলের জন্য একটা রাস্তা করার পরিকল্পনা করছেন। এতে মহসিন মিয়ার কী উপকার হবে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ দায়িত্ব তো তাঁর নয়। সেটা সরকার দেখবে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিমন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে তাঁর জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।