রোজা এলে এটাই যেন নিয়ম

.
আব্দুল আউয়াল, বগুড়া
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ২২:৪২
প্রতিবছর পবিত্র রমজানের আগে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে, এটিই যেন নিয়ম। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি বগুড়ায়। জেলার বড় দুটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্য চিনি, ছোলাসহ সব ধরনের ডালের দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাল, মাছ, মাংসের দামও। রোজার সময় এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে খেজুর, বেগুন, শসা, ধনেপাতা, পেঁয়াজ ও লেবু। এসবই মূলত ইফতারি তৈরির উপাদান। সারাদিন সিয়াম সাধনার পর তৃষ্ণা মেটাতে লেবুর শরবত পান করেন অনেকেই। রোজা শুরুর আগেই সেই লেবুর দাম বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যে লেবু প্রতি হালি বিক্রি হতো ১৫ টাকায়, গতকাল মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। খেজুরও এখন নাগালের বাইরে। গত রমজানে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া জাহিদি খেজুর এবার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৭০০ টাকার মরিয়ম খেজুর প্রতি কেজি ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব ভোগ্যপণ্যের বেশির ভাগের সরবরাহ সংকট না থাকলেও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজান সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজাবাজারে পণ্য কিনতে আসা শরিফ মণ্ডল। তিনি বলেন, যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে স্বল্প আয়ের মানুষের চলা কঠিন। মাসে চার সদস্যের পরিবারের খরচ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। এই টাকা পাব কোথায়?
রাজাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুনের দাম ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। বাজারে এখন বেগুন ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলা ও খেসারি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যথাক্রমে ১১০ ও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল সরু চাল ৭৫, মাঝারি চাল ৬৫ ও মোটা চাল ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। তবে বাজারে তেল, আটা ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ডিমের দাম কমেছে হালিতে ৪ টাকা। এক হালি ডিম ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা বলেন, ডলারের দাম ও আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া দেশের নামিদামি ছয়-সাতটি বড় প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা এমন এক কৌশল করে, যাতে খেজুর বা যে কোনো পণ্য আমদানি না করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেই কিনতে হয়। প্রশাসন সব জানে, এগুলো ওপেন সিক্রেট।
রাজাবাজারে মুদি দোকানি আবুল কালাম বলেন, আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনি। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।
ফতেহ আলী বাজার ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। এ বাজারে মাছ, দেশি মুরগি, ছাগল ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাসির মাংস কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ও গরুর মাংস ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার, সোনালি ও পাকিস্তানি মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে দেশি মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের মাছ কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল রুই ৩৪০ টাকায়, কাতল ৪০০ ও টেংরা মাছ ৪৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ বিশু বলেন, স্থানীয় আড়তগুলোয় মাছের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দামও কমে আসবে। একই কথা বলছেন এ বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মোস্তফা আলী।
রমজানের জন্য মাছ-মাংস কিনতে আসা চাকরিজীবী মনসুর শেখ বলেন, বাজারে এসে দাম শুনে ঘাম ছুটছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাজার মনিটরিংয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
বগুড়ার মেসার্স সায়েম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবদুল মান্নান বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খেজুর আমদানি করিনি। চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকার বড় আমদানিকারকদের থেকে বেশি দামে খেজুর কিনে বাজারে সরবরাহ করেছি। তাই দাম বেড়েছে।
বগুড়ার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, রমজান সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং চলেছে। এরপরও কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এর কারণ নিয়েও আমরা কাজ করছি। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।