ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

ঋণের বোঝা ছাড়া কিছুই রইল না তাদের

ঋণের বোঝা ছাড়া কিছুই রইল না তাদের

নিহত দুলালের ছবি হাতে মা আনোয়ারা বেগম সমকাল

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ২২:৪৪ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ২৩:১১

অভাব ঘোচাতে ধারকর্জ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে ছিলেন কামাল ও দুলাল। তাদের মা-বাবার চোখে স্বপ্ন ছিল ঋণের বোঝা শেষ হলেই সংসারে ফিরবে সুদিন। একটুখানি সুখের দেখা মিলবে পরিবার দুটিতে। অথচ সুদূর প্রবাসে ট্রেনের ধাক্কায় দু’জনের মৃত্যুতে এখন অন্ধকার নেমে এসেছে দুই পরিবারে। 
গত ৩ মার্চ রাতে রেললাইনের পাশ থেকে কামাল ও দুলালের লাশ উদ্ধার করে মালয়েশিয়ান পুলিশ। দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের এলাহাবাদ গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন (২৫) ও হাবিবুর রহমানের ছেলে দুলাল মিয়া (৩২)। দু’জনই কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। কাজ করতেন একটি ওয়ার্কশপে। কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ট্রেনের ধাক্কায় তাদের মৃত্যু হয় বলে জানান বাংলাদেশ হাইকমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এলাহাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কামাল-দুলালের পরিবারে চলছে মাতম। তাদের মা-বাবা ও স্বজনের আহাজারিতে ভারী চারপাশ।
নিহত দুলাল মিয়ার মা আনোয়ারা বেগম জানান, গত এক বছরে স্বামী এবং আরও দুই সন্তান হারিয়েছেন তিনি। চার ভাই, পাঁচ বোনের সংসারে দুলাল ছিল সবার ছোট। আরেক সন্তান দেলোয়ার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামে। ১৬ মাস আগে সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও থেকে সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান দুলাল। মায়ের কাছে স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে যান। দুলালের মৃত্যুতে এখন অথৈ সাগরে পড়েছেন তাঁর মা। কী দিয়ে পরিশোধ করবেন ঋণ, পুত্রবধূ ও দুই নাতনিকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তিনি। এই চিন্তায় পুত্রশোকও মলিন হয়ে উঠছে কখনও কখনও। 
দুলাল মিয়ার প্রতিবেশী কামাল হোসেন। সম্পর্কে চাচাতো ভাই। মেধাবী ছাত্র কামাল টাকার অভাবে করতে পারেননি লেখাপড়া। ১৪ মাস আগে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে চলে যান মালয়েশিয়া। বাবা-মা ও চার ভাইয়ের অভাবের সংসারে সুখ আনতে চেয়েছিলেন কামাল। এরই মধ্যে ঋণের বেশ কিছুটা পরিশোধ করেছেন। দেশে ফিরলেই বসতেন বিয়ের পিঁড়িতে।
কামালের শোকাহত বাবা শহিদ মিয়া বলেন, ‘কামালের সঙ্গে গত বুধবার রাতে শেষবার কথা হয়েছে। এই সোমবার ফোনে জানতে পারি আমার ছেলে কামাল আর নাই। পিতা হিসেবে তার জন্য তো আর কিছু করার নাই, শুধু দেশের মাটিতে যদি তার দাফনটা করতে পারতাম।’
এলাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আমীন জানান, লাশ দুটি দেশে আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×