কুমিল্লায় দু’পক্ষের গোলাগুলি প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

প্রকাশ্যে এভাবেই গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগকর্মী রাব্বিকে। ধারালো অস্ত্র হাতে আরও দুই যুবক। শুক্রবার কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা এলাকায় -সমকাল
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪ | ০০:৪৭ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ | ০০:৪৭
কুমিল্লায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে জামিল হাসান অর্ণব (২৭) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আটজন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের শাসনগাছা বাস টার্মিনালের পাশের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত অর্ণব শহরের শাসনগাছা মধ্যমপাড়ার আজহারুল ইসলামের ছেলে। সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি শাসনগাছা বাস টার্মিনালের সততা বাস সার্ভিসের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিল।
আহতদের মধ্যে নাজমুল জামান অনিকের ডান পায়ে, নেয়ামত উল্লাহর কোমরে, নুরুল আফসার মোহনের পিঠে এবং নাজমুল হাসানের হাতের নিচে গুলি লেগেছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাজমুল হোসেন ও মোহনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয়রা জানান, শাসনগাছা লেগুনা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে শাসনগাছা মধ্যমপাড়া দফাদার বাড়ি ও মোল্লাবাড়ির দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সংঘর্ষে জড়ানো দফাদার বাড়ির আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কাশেম গ্রুপ একসময় এই স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করত। গত বছর মোল্লাবাড়ির ছাত্রলীগ কর্মী রাব্বি ও একই এলাকার আলাউদ্দিনকে স্ট্যান্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন মারুতি স্ট্যান্ডে এক নারী যাত্রীর সঙ্গে মারুতি যাত্রীবাহী গাড়ির চালক সাকিব ও লাইনম্যান জামালের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে শাসনগাছা মোল্লাবাড়ির ওই নারী তাঁর নিকটাত্মীয় ছাত্রলীগ কর্মী রাব্বীকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মারুতিসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় চালক সাকিব ও লাইনম্যান জামাল পালিয়ে শাসনগাছা মধ্যমপাড়া এলাকায় তাদের বাড়িতে চলে আসে। মারুতি গাড়িটির মালিক কাশেমের বাড়ি একই এলাকায়।
পরে শ্রমিক নেতা খলিল ও তার ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী রাব্বীর নেতৃত্বে আলাউদ্দিন, জনি, রিয়াজসহ একদল অস্ত্রধারী শাসনগাছা মধ্যমপাড়া এলাকায় হামলা চালায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। অন্যদিকে, কাশেম গ্রুপের লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। খবর পেয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা, ডিবি পুলিশ, র্যাবের টিমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অর্ণব, অনিক, নেয়ামত উল্লাহ, মোহন, নাজমুল গুলিবিদ্ধসহ আটজন আহত হয়। তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক অর্ণবকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতরা সবাই আবুল কাশেম গ্রুপের লোকজন।
নিহত অর্ণবের বাবা আজহারুল ইসলাম জানান, তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলে অর্ণব জুমার নামাজ শেষে বাসা থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি আহাজারি করে বলেন, তাঁর ছেলের কী অপরাধ ছিল, তাকে কেন গুলি করা হলো? এত অস্ত্র কোথায় থেকে এলো? তিনি অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এদিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, অর্ণব আমাদের একনিষ্ঠ কর্মী। এবারের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তাঁর নাম বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। আমরা এ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই।
জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক কলেজছাত্র গুলিতে মারা গেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খলিল ও রিয়াজ নামের দু’জনকে আটক করেছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, ঘটনার আশপাশের এলাকার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।
- বিষয় :
- গুলি করে হত্যা