আট মাস পর বিদ্যালয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্ধ শিক্ষার্থী

শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ০০:১২
সড়ক দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার। তবে জীবনের তরে হারায় চোখের আলো। দুর্ঘটনার আট মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে যায় অন্ধ রুবিনা। বিদ্যালয়ে বিষাদময় পরিবেশ তৈরি হয়। তাকে পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে সহপাঠীরা। এ সময় সেও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে কণ্ঠস্বর শুনে বান্ধবীদের নাম ধরে ডেকে কুশল বিনিময় করে রুবিনা আক্তার। এ ঘটনা ঘটে মুশুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। রুবিনা নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ধরগাঁও গ্রামের রুবেল মিয়ার মেয়ে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট ইজিবাইকে চড়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক ধরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল রুবিনা আক্তার। এ সময় দ্রুতগামী একটি বাস তাদের বহন করা ইজিবাইকটিকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় রুবিনাসহ ইজিবাইকের পাঁচ যাত্রী। পরে দু’জন মারা যায়। রুবিনাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবনের তরে অন্ধ হয়ে যায় সে। তার ডান হাত ও বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে বাঁচাতে সহায়-সম্বল বিক্রি করেন দিনমজুর বাবা রুবেল মিয়া।
বাড়িতে ফিরে প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠে গিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে তার মনপ্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই বৃহস্পতিবার বাবার সঙ্গে বিদ্যালয়ে যায় রুবিনা। বিদ্যালয়ে গিয়ে দুর্বলতাবশত ফটকের সামনে থাকা একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে পড়ে সে। খবর পেয়ে সহপাঠীরা তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু কাউকে দেখতে পারছিল না সে। দুর্ঘটনার কারণে রুবিনার মুখমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে দেখে আঁতকে ওঠে সহপাঠীদের অনেকে। দেখতে না পেলেও সহপাঠীদের কণ্ঠস্বর শুনেই বলে দিচ্ছে কে তার সঙ্গে কথা বলছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে। এমনকি অনেককে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছে।
রুবিনা কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে, ‘আল্লাহ আমারে তুমি এমন শাস্তি কেন দিলা? আমি কি আর তোদের দেখতে পারব না। আমি কি আর তোদের মতো লেখাপড়া করতে পারব না। তোরা সকলে মিলে আমার চোখের একটা ব্যবস্থা কর। আমি আবার পড়ালেখা করতে চাই।’
রুবিনার বাবা রুবেল মিয়া জানান, দুর্ঘটনায় দায়ী বাসের মালিক তাঁকে কোনো সহায়তা করেনি। স্থানীয়দের উদ্যোগে লাখ দেড়েক টাকার একটা ব্যবস্থা হয়েছিল, যা চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে গেছে। এখন টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। চিকিৎসক বলেছেন, বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারলে রুবিনা আবার দেখতে পারবে। কিন্তু তাঁর পক্ষে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা কোনো দিনও সম্ভব হবে না।
মুশুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘মেয়েটি শিক্ষার্থী হিসেবে খুব ভালো ছিল। দুর্ঘটনার পর তার চিকিৎসার জন্য বিদ্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিদ্যালয়ে আসার পর তাকে অফিসে এনে অনেক বুঝিয়েছি, চিকিৎসায় যদি তার চোখ ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক টাকার দরকার, যা তার পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব।’
- বিষয় :
- সড়ক দুর্ঘটনা