ছিনতাইকারীদের দখলে মেঘনা সেতু

আলো জ্বলে না ল্যাম্পপোস্টে, হেডলাইট জ্বালিয়ে সেতু পার হয় যানবাহন। ছবি- সমকাল
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১৭:০২ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ | ১৮:৫২
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মেঘনা সেতু বর্তমানে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীদের উৎপাতে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস ধরে এই এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। পাশাপাশি সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলো না জ্বলায় ও পাহারার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেতুর মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র।
সরেজমিনে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সবগুলো ল্যাম্পপোস্টই অন্ধকার। হেডলাইটের আলোয় চলাচল করছে যানবাহন, অন্ধকারেই হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন কয়েকজন মানুষ। সেতুর নিচের গজারিয়া অংশের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা যায় মানুষের ছোট বড় জটলা। এর মাঝে কিছু মাদকসেবীকেও দেখা গেছে। তবে এ সময় সেতু এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে কোন বাহিনীকেই দেখা যায়নি।
একাধিক যানবাহন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতের বেলায় ওঁত পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। তারা গাড়ির কাঁচে ঢিল মেরে এবং হুমকিধমকি দিয়ে গতি রোধ করে, এরপর মোবাইল, নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিস ছিনতাই করে নেয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেতুর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও অংশে দেশের স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানি থাকায় সেখানে চাকরি করা অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বসবাস গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। কাজ শেষে এই সেতু দিয়েই পারাপার হতে হয় তাদের, আর তখনই পড়েন ছিনতাইকারীর খপ্পরে।
এছাড়া দূরপাল্লার যানবাহন যেমন ট্রাক,প্রাইভেটকার,মাইক্রোবাস চালকদের গাড়ি গতিরোধ করে ছিনতাইকারীরা মূল্যবান মালামাল ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে।
ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত সেনা সদস্য সোহেল রানা জানান, তিনি চলতি ৩ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী বাসে করে গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রাত সাড়ে ৯টায় মেঘনা সেতুর ঢালে জামালদি বাসস্ট্যান্ডে নামলে ৩ জন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে তাকে ঘিরে ধরে। তাকে চাপাতি, ছুরি দিয়ে আঘাত করে তারা আট হাজার টাকা, মোবাইল সেট, স্বর্ণের আংটি লুট করে।
এ বিষয়ে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়্যারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, সেতুর সিঁড়ির লোহা, নাট-বল্টু, পাইপ চুরি হয়। এছাড়া পথচারীরা প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
পুলিশের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই জানিয়ে ভবেরচর হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবির (পিপিএম) বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ যদি সেতুর উপর পর্যাপ্ত লাইট ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতো তাহলে ছিনতাই ও সেতুর মূল্যবান মালামাল চুরি হওয়া থেকে রক্ষা করা যেত।
সেতুটি নির্মাণের সময়ে অনেক মূল্যবান ক্যাবল লাগানো হয়েছিল, তবে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তা চুরি করে নিয়ে গেছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস। তিনি আরও বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় ল্যাম্পপোস্টগুলোকে পুনরায় চালু করা যাচ্ছে না। সেতুর নিরাপত্তা দেখার মতো যথেষ্ট জনবল তাদের নেই বলেও জানা এই কর্মকর্তা।
- বিষয় :
- ঢাকা-চট্টগ্রাম
- মেঘনা
- সেতু
- ছিনতাইকারী চক্র