- সারাদেশ
- নৌবাণিজ্যে নতুন সংকট
নৌবাণিজ্যে নতুন সংকট

ছবি: ফাইল
আমদানি কার্যক্রমে বিধিনিষেধ, ডলারের দাম ওঠানামা করা ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দেশের নৌবাণিজ্যে। বছরের শেষদিকে এসে গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টর মোকাবিলা করছে নতুন এই তিন সংকট। এটির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও ১৯টি বেসরকারি আইসিডিতে। এক যুগ ধরে নৌবাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় প্রতিবছর নতুন রেকর্ড করছিল এসব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এবার তারা হোঁচট খেয়েছে। রেকর্ড থেকেও আছে অনেক দূরে। চট্টগ্রাম বন্দরে গতবারের তুলনায় এবার কমেছে আমদানি ও কনটেইনার আসার পরিমাণ। জাহাজ আসার হার গত বছরের তুলনায় এবার বাড়লেও কমেছে বন্দর ও কাস্টমসের আয়ও। গতবার ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করলেও এবার আর তা স্পর্শ করতে পারছে না দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। নৌবাণিজ্য হ্যান্ডেল করা ১৯ বেসরকারি আইসিডিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। সর্বশেষ গত চার মাসেই বেসরকারি এই ডিপোগুলো লোকসান গুনেছে ১৭০ কোটি টাকা। অথচ রপ্তানি পণ্য শুল্ক্কায়নের শতভাগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এসব আইসিডিতে। আবার ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্যও খালাস করে তারা।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল ছিল এবার। যুদ্ধের প্রভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে অনেক দেশের রিজার্ভ। ডলারের দামও ব্যাপক হারে ওঠানামা করেছে। এসবের প্রভাব ছিল বাংলাদেশেও। এবার তাই নৌবাণিজ্যের পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কম।'
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, 'প্রতি মাসে আইসিডিগুলো গড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ কোটি টাকা লাভ করে। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে উল্টো ১৭০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। ডলার সংকটে ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়া, বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা, আন্তর্জাতিক বাজারে যুদ্ধের প্রভাব পড়া ও দেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবার বছরের শেষদিকে পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে ভাটা পড়েছে। এটির প্রভাবে ডিপোগুলোতেও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।'
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, 'বন্দরেরও সার্বিক কার্যক্রমে এবার গতি ছিল কম। এক যুগ ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর নিজেদের রেকর্ড নিজেরা ভাঙত। কিন্তু এবার হচ্ছে ব্যতিক্রম ঘটনা। গতবার ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করলেও এবার আর তা ছুঁতে পারিনি আমরা। জাহাজ আসার পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও সার্বিকভাবে আগের তুলনায় এবার কম ছিল বাণিজ্যের পরিমাণ।'
এবার আর রেকর্ড ছুঁতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর
এক যুগ ধরে প্রতিবছর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়লেও এবার ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গত বছর তারা ২০ ফুট দীর্ঘ ৩২ লাখ ১৪ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেল করলেও এবার ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডেল করেছে সাড়ে ৩১ লাখ কনটেইনার। ফলে প্রায় ৫০ হাজার কনটেইনার কম ওঠানামা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গত বছর কার্গো পণ্য হ্যান্ডেল হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন। গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্গো পণ্য ওঠানামা হয়েছে ১১ লাখ ৮০ টন। গতবারের তুলনায় এবার জাহাজ আসার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ হাজার ২০৯টি জাহাজ এলেও এবার ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসেছে ৪ হাজার ৩০০টি। জাহাজ আসার পরিমাণ বাড়লেও গতবারের রেকর্ড এবার আর অতিক্রম করতে পারেনি বন্দর। গতবারের তুলনায় এবার বন্দরের আয়ও তাই কম হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্নিষ্টরা।
চার মাসে ১৭০ কোটি টাকা লোকসান
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, সর্বশেষ চার মাসে তাঁদের প্রায় ১৭০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ঋণাত্মক এ ধারা অব্যাহত ছিল ডিসেম্বরেও। পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে। ফলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদনও কমে গেছে। গত চার মাসে আমদানি ও রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে বলে ধারণা করছে বিকডা।
কমে গেছে বন্দর ও কাস্টমসের আয়ও
আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে রাজস্ব আয়ে বড় প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসে। গত আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ক্রমাগত কমেছে রাজস্ব আয়। গত আগস্ট মাসে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কাস্টমসের রাজস্ব আয় ছিল ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে এই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে কাস্টমসের আয় হয় ৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত রাজস্ব আয় কমেছে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। হিসাব এখনও চূড়ান্ত না হলেও এ ধারা অব্যাহত ছিল নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও। তাই কাস্টমসের আয় গতবারের তুলনায় এবার কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন