- সারাদেশ
- মেট্রোরেলে প্রযুক্তির চমক
মেট্রোরেলে প্রযুক্তির চমক

ঢাকায় গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে চলাচল শুরু করেছে মেট্রোরেল
ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন মেট্রোরেল। গত ২৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করেছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। জাপানের প্রযুক্তিতে তৈরি দেশের প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেলের নান্দনিক স্টেশনগুলোতে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সব সুবিধা। ট্রেন অটোমেটিক স্টপ কন্ট্রোলের মাধ্যমে কখন কোথায় থামাতে হবে- সেটি নির্ধারিত হবে এবং নানা প্রযুক্তি সুবিধা যুক্ত হওয়ায় চালকের বেশি কিছু করার নেই। ট্রেন চলবে সফটওয়্যারে। অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের (ওসিসি) মাধ্যমে পুরো সিস্টেম পরিচালিত হবে। প্রোগ্রাম রুট কন্ট্রোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় বেগ পোহাতে হবে না। ঢাকা মেট্রোর অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মুভিং ব্লক কমিউনিকেশন বেজড টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও) থাকবে। মেট্রোরেলে যাত্রী নিরাপত্তায় থাকছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। মেট্রোরেলে চোখধাঁধানো প্রযুক্তির সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
অটোমেশন সিস্টেম
বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিউনিকেশন বেজড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম (সিবিটিসি) যুক্ত করা হয়েছে। থাকছে অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও), অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন (এটিপি), অটোমেটিক ট্রেন সুপারভিশন (এটিএস) ও মুভিং ব্লক সিস্টেম (এমবিএস)। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে স্ট্ক্রিন ডোর সিস্টেম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. মিজানুর রহমান জানান, এমআরটি একটি রেল বেজড প্রকল্প হওয়ায় এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করবে। এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মুভিং ব্লক কমিউনেকশন বেজড টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে, অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন বা এটিও থাকবে। এসবের ফলে চালকের কিছু করার থাকবে না। ট্রেনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সেন্ট্রাল কন্ট্রোল যেখানে থাকবে সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে।
নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল
চলার সময় মেট্রোরেলের শব্দ ও কম্পন কমাতে লাইনজুড়ে রাখা হয়েছে বিশ্বের বিরল ও ব্যয়বহুল আধুনিক প্রযুক্তি 'নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল'। এই ব্যারিয়ারের ফলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বায়তুল মোকাররমের মতো এলাকাগুলোতে শব্দদূষণের মাত্রাও কমে আসবে। নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়ালের টেকনোলজি শব্দ কমাতে সহায়তা করবে বলে মেট্রোরেলের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মানুষের কাছে এটি বিরক্তির কারণ হবে না।
রেডিও অ্যান্টেনা
মেট্রো রেললাইনের প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার পরপর রেডিও অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে আছে চারটি করে অ্যান্টেনা। প্রতিটি অ্যান্টেনা ট্রেন ও কন্ট্রোল সেন্টারের (নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। তাহলে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা বরাবর হবে না। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ডিপোয় একটি অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থামবে, কত গতিতে চলবে- এর সবই সেখান থেকে আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ ও বের হতে চিপযুক্ত কার্ড
মেট্রোরেলের টিকিট পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের চিপযুক্ত কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী বেরও হতে পারবেন না। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। এটাকে সিঙ্গেল জার্নি টিকিটও বলা হয়। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে।
টিকিট ও ভাড়ার জন্য কার্ড রিচার্জের ব্যবস্থা
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। স্টেশনে যাত্রীদের তাৎক্ষণিক টিকিট কাটার ব্যবস্থার পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মাসিক টিকিটও মিলবে বিশেষ মেশিনে। যাকে বলা হচ্ছে র্যাপিড পাস। এই পাস প্রবেশের মুখে স্পর্শ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা খুলে যাবে। এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে সনি কোম্পানি। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রে কার্ডে টাকা রিচার্জ করা যাবে।
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং
স্টেশনে ও ট্রেনের ভেতরে আধুনিক প্রযুক্তির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে চলবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং। শুধু কোচের ভেতর নয়, প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশনের ওপরও নজর রাখবে। কোনো অঘটন ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা
মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য থাকছে অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশনের ব্যবস্থা। আপৎকালীন ট্রেন থেকে বের হওয়ার জন্য জরুরি দরজা রাখা হয়েছে। মেট্রো স্টেশন, রুট অ্যালাইনমেন্ট এবং ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয় স্প্রিঙ্কলার ও ওয়াটার হাইড্র্যান্ট সংযোজনের ব্যবস্থাও থাকছে। স্টেশন ও ট্রেনে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ফলে নিশ্চিন্তে ও স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করা যাবে।
মন্তব্য করুন