- সারাদেশ
- 'শান্ত' অনিকের অনলাইনে অশান্ত কর্মকাণ্ড
'শান্ত' অনিকের অনলাইনে অশান্ত কর্মকাণ্ড

আবদুল কাইয়ুম অনিক
মাদ্রাসায় পড়ে কোরআনে হাফেজ হন আবদুল কাইয়ুম অনিক। শান্ত প্রকৃতির অনিক ছোট বেলায় কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে আসক্ত ছিলেন। আস্তে আস্তে অনলাইনের মাধ্যমে দখল নেন প্রযুক্তির। পা বাড়ান অপরাধ জগতে। পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে ভুয়া মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এর আগে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা করতে গিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অনিক। গতকাল শুক্রবার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অনিককে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে পিবিআই।
অনিকের (২৪) বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামে। কাপড় ব্যবসায়ী আবদুছ ছালামের ছেলে অনিক। কোরআনে হাফেজ হওয়ার পর উচাখিলা কেরামতিয়া মাদ্রাসায় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে উচাখিলা বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই সদস্যরা।
পিবিআই জানায়, উচাখিলা বাজারের সেবা ডায়াগনস্টিক নামে এক প্রতিষ্ঠানের মালিক রাশিদুল ইসলাম। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার মোবাইল ফোনে কল যায় একটি নম্বর থেকে। নিজেকে পিবিআইর এসআই ফারদিন আহম্মেদ পরিচয় দিয়ে বলেন- 'তোমার নামে পিবিআইতে একটি মামলা হয়েছে। মামলার ওয়ারেন্ট (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) আছে। তুমি আমাদের নগদ অথবা বিকাশ (একটি নম্বর দেওয়া হয়) নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠাও। আমরা আসব না, মামলাটি এখানে শেষ করে দেব'।
মোবাইল ফোনে আরও বলা হয় 'আর তোমার ইমু নম্বরটি দাও। আমরা মামলার কপি ও ওয়ারেন্ট পাঠাচ্ছি'। ওই অবস্থায় রাশিদুল ইসলাম তার ইমু নাম্বারটি পাঠালে সেখানে পুলিশের মনোগ্রাম যুক্ত একটি ভুয়া প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি পাঠানো হয়। কাল্পনিক একটি এফআইআর তৈরি করে তাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে উপপরিদর্শক ফারদিন আহম্মেদের নাম লেখা হয়। গত ৩ জানুয়ারি সকালে ও বিকেলে রাশিদুলকে ফোন করে টাকা পাঠানোর জন্য তাগাদা দেওয়া হলে বিষয়টি যাচাই করার জন্য পিবিআই ময়মনসিংহ কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। ফারদিন নামে কোনো এসআই পিবিআইতে কর্মরত নেই জানতে পেরে পিবিআই কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন রাশিদুল।
বিষয়টি নিয়ে রাশিদুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। তদন্তে নেমে অনিককে গ্রেপ্তার করেন পিবিআই ময়মনসিংহ কার্যালয়ের এসআই অমিতাভ দাস।
ব্যবসায়ী রাশিদুল ইসলাম বলেন, 'তাকে মোবাইল ফোনে পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনিয়ে বলা হচ্ছিল ঈশ্বরগঞ্জ আছি, টাকা না পাঠালে উচাখিলা এসে ধরে নিয়ে যাব।'
অনিক উচাখিলা বাজারের গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে ভগ্নিপতি সুজন মিয়ার বাসায় বসেই বেশিরভাগ সময় কাজ করত। সুজন মিয়ার দাবি, অপরাধী হওয়ার মতো কোনো কাজ করেনি অনিক।
বাবা আবদুছ ছালাম বলেন, 'আমার ছেলেকে আগেও এক ব্যবসায়ী ফাঁসিয়েছে, এখনও ফাঁসানো হয়েছে।'
পিবিআই ময়মনসিংহের এসপি রকিবুল আক্তার বলেন, পিবিআইর নামে প্রতারণার মতো দুঃসাহসিক ঘটনায় অনিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতারক চক্রের সব সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অনিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তখন মামলায় কিছুদিন জেলও খাটেন তিনি।
মন্তব্য করুন