সমকাল :আমদানি কনটেইনার কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও বিরাজ করছে অস্থিরতা। সামনে নির্বাচনের কারণে উত্তপ্ত হতে পারে দেশের রাজনীতির মাঠও। কঠিন এসব চ্যালেঞ্জ কতটা মোকাবিলা করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস?

এমএ লতিফ :শেখ হাসিনার সরকার যতদিন থাকবে ততদিন সব চ্যালেঞ্জেই জিতবে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস। এ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বছরে ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হতো মাত্র ১৭ লাখ। এখন সেটি প্রায় দ্বিগুণ, ৩২ লাখ। আগে কথায় কথায় অচল হতো বন্দর। অথচ গত ১৪ বছরে এক দিনের জন্যও অচল হয়নি বন্দর ও কাস্টমস। বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, সেটিও ভালোভাবে মোকাবিলা করবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা থাকলেও নতুন বছরেও চ্যালেঞ্জে জিতবে বন্দর ও কাস্টমস।

সমকাল :রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে কীভাবে?
এমএ লতিফ :দেখুন, ১৪ বছর আগে বন্দরের তহবিলে তিন হাজার কোটি টাকা ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এই ১৪ বছরে দুটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসও দেশবাসী দেখেছে। বন্দর-কাস্টমস সেই দুঃসময়ও ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। আগের ভুল বিএনপি-জামায়াত আর করবে বলে মনে হয় না। তারপরও যদি তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় তাহলে বিকল্প প্রস্তুতিতে বন্দর-কাস্টমস সচল রাখব আমরা।

সমকাল :চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত গতিতে অগ্রগতি হচ্ছে না কেন?
এমএ লতিফ :এই সরকার পতেঙ্গা, লালদিয়া ও বে-টার্মিনাল এই তিনটি টার্মিনাল করছে। সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরে আরেকটি টার্মিনাল করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সবই হবে। এর মধ্যে পতেঙ্গা টার্মিনালের কাজ শেষ হয়ে গেছে। বে-টার্মিনালের কাজও প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানার ৬৬ দশমিক ৮৫ একর জমির জন্য ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকার চেক আরও আগে আমরা হস্তান্তর করেছি। বাকি ভূমি নামমাত্র মূল্যে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেছে বন্দর। সেটিরও সন্তোষজনক উত্তর আসবে।

সমকাল :চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দক্ষ জনবল নেই। বন্দরের প্রতিটি গেটে নেই জরুরি স্ক্যানারও। এ সংকট থেকে উত্তরণ হবে কীভাবে?
এমএ লতিফ :আপনি অনেক কিছু নেই বলছেন। তারপরও দেখুন গত বছর ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও রাজস্ব আদায় করেছে তারা ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তা বেশি। তাই আমি আশাবাদী। আরও স্ক্যানার বসানোর কাজে নতুন বছরে অগ্রগতি হবে। কাস্টম হাউসের কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন আরও কাস্টম হাউস করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। কাজেই কোনো সমস্যাই দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করি না আমি। সব সমস্যাই কাটিয়ে উঠবে বন্দর ও কাস্টমস।

সমকাল :চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প কোনটি মনে করেন?
এমএ লতিফ :বে-টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা তিন গুণ বেড়ে যাবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে দিনে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা সময়ে ৯ দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ চলাচল করতে পারে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টা আরও বেশি দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ আসা-যাওয়া করবে। এখন বন্দরে আসা জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ কনটেইনার বহন করতে পারে। কিন্তু বে-টার্মিনালে পাঁচ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজও ভিড়তে পারবে। এর সুফল যোগ হবে অর্থনীতিতে।