- সারাদেশ
- জয়নুল সংগ্রহশালায় হচ্ছে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স
শিল্প
জয়নুল সংগ্রহশালায় হচ্ছে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগ্রহশালায় দর্শনার্থীরা সমকাল
ময়মনসিংহকে ব্র্যান্ডিং করা হয় 'শিল্প ও সংস্কৃতি'র শহর হিসেবে। এ শহরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন অনন্য এক নাম। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শিল্পীর অনন্য সব কীর্তি নিয়ে গড়া সংগ্রহশালা এবার নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে। সংগ্রহশালা আধুনিকায়নের পাশাপাশি সেখানে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা করা হয়েছে। এ জন্য অন্তত আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ নগরীর মানুষের প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার একমাত্র স্থান ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে জয়নুল আবেদিন উদ্যান। প্রাচীন এই নগরীর উত্তর পাশ দিয়ে প্রবহমান ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ১৯৭৫ সালে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন। পরবর্তী সময়ে সেখানে দোতলা ভবন করা হয়। পরে এ কাজে সরকার ৩ দশমিক ৬৯ একর জমিসহ একটি বাড়ি অধিগ্রহণ করে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটি নানা চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। সংগ্রহশালায় প্রথমে ৭০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল, যার অধিকাংশ তৈলচিত্র। নজরকাড়া ছবির মধ্যে ছিল শিল্পীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে অঙ্কিত ছবি, গুণ টানা, নদী পারাপারের অপেক্ষায় পিতা-পুত্র এবং দুর্ভিক্ষ। এখান থেকে ১৭টি অতি আকর্ষণীয় ছবি ১৯৮২ সালে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ১০টি ১৯৯৪ সালে আবার উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংগ্রহশালার নিচতলায় কর্মকর্তারা বসেন। দ্বিতীয় তলার বারান্দায় শিল্পীর ৫২টি নিজস্ব ছবি রয়েছে। দুটি গ্যালারিতে বর্তমানে ৬২টি চিত্রকর্ম, জয়নুলের তুলি, খাট, পোশাকসহ ১২৭টি ব্যবহূত জিনিস রয়েছে। সংগ্রহশালা দেখার জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে দর্শনার্থী। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৫০২ জন দর্শনার্থী সংগ্রহশালা দেখেন। চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১১ হাজার ৮৩৭ জন টিকিট কেটে এবং বিনামূল্যে দেখেছেন আরও ২৬৫ দর্শনার্থী।
জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণাধীন শাখা জাদুঘরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর অর্জন করে পরপর দুই বছর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। এখানে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পরিদর্শনের সুযোগ রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকলেও বাকি দিন দর্শনার্থীর জন্য খোলা থাকে।
সম্প্রতি সংগ্রহশালায় গিয়ে কথা হয় একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। জামালপুরের ইসলামপুর থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ১৭ জনের একটি দল জয়নুল সংগ্রহশালা দেখতে আসে। দলটির সদস্য মো. মাসুম, আশিকুর রহমান ও রিমন ইসলাম জানায়, শুধু বইয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সম্পর্কে তারা পড়েছে। এবার চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছে। দর্শনার্থী শেলী আফরোজ জানায়, এখানে শিল্পীর শিল্পকর্মসহ ঐতিহাসিক ছবিও রয়েছে। এসব দেখে অনেক কিছু শেখার আছে।
ময়মনসিংহ সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে সংস্কৃতি পল্লি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে এ সংগ্রহশালাকে নতুন রূপ দিতে এবং সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়তে কাজ করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বর্তমান চত্বরে জয়নুল সংগ্রহশালায় আধুনিক ভবন, একটি থিয়েটার, তিনটি পৃথক কমপ্লেক্স, তিনটি অডিটোরিয়াম, বিভিন্ন ধরনের শিল্পীর প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারি এবং অতিথিদের আবাসনের ব্যবস্থাও থাকবে।
ময়মনসিংহ অনসাম্বল থিয়েটারের সভাপতি আবুল মনসুর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা আশ্বাস শুনলেও বাস্তবে কাজ হচ্ছে না। শিল্পচর্চায় মহড়া করার সুযোগও নেই। তাঁদের দাবি, দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক সাংস্কৃতিক পল্লি। শিল্পী ও কলাকুশলীরা যেন মহড়া করতে এবং বসতে পারেন, সেই সুযোগ চান তাঁরা। জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার উপকিপার মুকুল দত্ত জানান, গত মাসেই আড়াইশ কোটি টাকার প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা অনুমোদন হয়েছে। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে যাবে। আধুনিকায়নের কাজ হলে সংগ্রহশালা আরও প্রাণবন্ত হবে।
মন্তব্য করুন