- সারাদেশ
- হিমাগারে পড়ে আছে ৫০ হাজার বস্তা আলু
হিমাগারে পড়ে আছে ৫০ হাজার বস্তা আলু

রংপুরের হিমাগারগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি) আলু পড়ে রয়েছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ নতুন আলু বাজার দখল করায় হঠাৎ কমে গেছে পুরোনো আলুর দাম। এ অবস্থায় পরিবহন খরচসহ হিমাগার ভাড়া দিলে লোকসান হওয়ার ভয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু বাজারে তুলছেন না। দীর্ঘদিন হিমাগারে পড়ে থাকা গত বছরের অবিক্রীত এসব আলুতে পচনও ধরেছে। ফলে ৩৯টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলুতে ছয় কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হবে হিমাগার মালিক-ব্যবসায়ীদের। এই বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
রংপুর শিল্প ও বণিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে রংপুরে উৎপাদিত আলু দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এই জেলায় ৩৯টি হিমাগারে আলুর ধারণ ক্ষমতা ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৮ টন। অন্যান্য বছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের ১৫ দিনের মধ্যে হিমাগার ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর হিমাগারগুলোতে ৫০ হাজার বস্তা আলু অবিক্রীত রয়ে গেছে।
হিমাগার মালিকরা জানান, গড়ে প্রতি বস্তা আলুর ক্রয়মূল্য পড়েছে ৯০০ টাকা, তার ওপর রয়েছে সংরক্ষণ ভাড়া ৩৫০ টাকা। সব মিলিয়ে অবিক্রীত আলু বস্তাপ্রতি ১ হাজার ২৫০ টাকা ধরা হলেও, লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় কোটি টাকারও বেশি। অথচ বর্তমানে প্রতিবস্তা আলুর দাম ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। আর ক'দিন পর বিনা পয়সায়ও এই আলু কেউ কিনবে না। এমনকি পচে যাওয়া এই আলু পুঁতে রাখারও জায়গা মিলবে না।
সরেজমিন গত রোববার রংপুর নগরীর ধর্মদাস এলাকায় কিষান হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ আলু। দীর্ঘদিন হিমাগারে থাকায় আলুতে পচন ধরছে। শ্রমিকরা পচে যাওয়া আলু আলাদা করছেন।
তারা জানান, পুরোনো আলুর দাম কমে গেছে। লোকসানের ভয়ে অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী সংরক্ষণ করা আলু বাজারে তুলছেন না। আবার হিমাগার ফাঁকা করতে অনেকেই আলু নামমাত্র দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। হিমাগার সংশ্নিষ্টরা জানান, গবাদি পশুর খাবার হিসেবে এসব আলু ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর নগরীর অদূরে খাসবাগ এলাকার আসাদুজ্জামান, আমিন মিয়া, মকবুল হোসেনসহ আলু চাষিরা জানান, প্রতিমণ আলু উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তার ওপর পরিবহন খরচ ও বস্তাপ্রতি ৩৫০ টাকা সংরক্ষণ ভাড়া দিতে হবে। আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য স্বপন রায়সহ কয়েকজন জানান, নতুন আলুতে পুরোনো আলুর দরপতন ঘটেছে। এ কারণে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করেননি।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রংপুর জেলায় গত মৌসুমে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রতি হেক্টরে প্রায় ২০ টন। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় অন্যান্য জেলায় রপ্তানি হয়। বর্তমানে পাইকারি হিসেবে প্রতিমণ আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতিকেজি আলুর দাম পড়ে ২০ টাকা। এতে বাজারে পুরোনো আলুর দাম পড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর চেম্বারের সভাপতি ও ব্যবসায়ী মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর নয়টি হিমাগারে এক লাখ টন আলু সংরক্ষিত ছিল। বাজারে দরপতনের কারণে তাঁর প্রায় ১০ হাজার বস্তা আলু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এখন বাজারে নতুন আলু ওঠায় এসব আলু আর বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এতে তাঁর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সোয়া কোটি টাকা বলে দাবি করেন তিনি।
রংপুর হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু জানান, তাঁর তিনটি নিজস্ব হিমাগারে অনেক আলু অবিক্রীত রয়েছে। এসব আলু মাটিতে পুঁতে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ছোট ছোট অনেক হিমাগার মালিককে এবার ঋণখেলাপি হতে হবে।
মন্তব্য করুন