- সারাদেশ
- পুরোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ নতুন ভবনের কাজ বন্ধ
পুরোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ নতুন ভবনের কাজ বন্ধ

ছাদ ও বিমের রড বের হয়ে পলেস্তারা খসে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা - সমকাল
'বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে এসে শ্রেণিকক্ষে ঢুকলেই গা ছমছম করে ওঠে। সবসময় আতঙ্কে থাকি। এই বুঝি কিছু একটা ঘটে যাবে। ছাদ, বিম ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে শ্রেণিকক্ষে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এর ফলে আমাদের পাঠদানে চরম বিঘ্ন ঘটে'- বলছিল পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার জলিশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার। ক্লাসে তার রোল ১। বিদ্যালয়টির শ্রেণিকক্ষ জরাজীর্ণ থাকায় মেধাবী এই শিক্ষার্থী ক্লাসে পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না। বিদ্যালয়ে এলেই সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়- জরাজীর্ণ ভবনে কখন কী ঘটে যায়!
একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাবাছুম অনি। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে বিদ্যালয়ের এ মেধাবী শিক্ষার্থী। তাবাছুম অনি বলে, 'বিদ্যালয়ের পুরো ভবনটিই জরাজীর্ণ। আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে আছি। প্রায়ই ছাদের পলেস্তারা খসে ইটের সুরকি শ্রেণিকক্ষে পড়ে। এতে ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শ্রেণিকক্ষে ঢুকলেই চোখ থাকে ছাদ ও বিমের দিকে। এই বুঝি পলেস্তারা খসে মাথার ওপর পড়বে।' শুধু ফারজানা ও তাবাছুমই নয়, জলিশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই ক্লাসে শিক্ষকের পাঠগ্রহণে মনোযোগী হতে পারে না। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে জলিশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্ধশত বছরের পুরোনো এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর ২১ বছর টিনের ঘরে বিদ্যালয়ের ক্লাস ও পাঠদান চলে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯৯৩ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবনটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর দীর্ঘ ২৯ বছরে ভবনটির কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে পলেস্তারা খসে যাওয়াসহ বিমের রড বের হয়ে গেছে। জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনটি কার্যত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা দেখে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় এবং দরপত্র আহ্বান করে। ২০২০ সালে কাজও শুরু হয়। কিন্তু সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার বেজমেন্টের কাজ শুরুর কিছুদিন পরই তা বন্ধ করে দেন। দুই বছর ধরে নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদার কালক্ষেপণ ও তালবাহনা করায় নির্ধারিত সময়ে ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, সংশ্নিষ্ট দপ্তর থেকে ঠিকদারকে বলা হলেও তিনি কোনো কর্ণপাত করছেন না। বিদ্যালয়ের এ জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার ক্রমে কমছে। তাই ভবনটির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি সৈয়দ কামরুজ্জামান মনজু বলেন, এ ভবনে এখন আর শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্ভব নয়। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন এর দায় কে নেবে?
জানতে চাইলে ঠিকাদার মোকাম্মেল রোকন বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন উন্নয়নমূলক কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। অর্থ ছাড় করতে না পারায় নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য বন্ধ ছিল। শিগগিরই ভবনের কাজ শুরু করা হবে।
দুমকী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুন নাহার ইয়াসমিন জানান, ওই বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ ও পাঠদান ব্যাহতের বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ কে বা কারা করছেন, এ বিষয়ে তিনি জানেন না। প্রধান শিক্ষককে বিকল্প ব্যবস্থা করে ক্লাস নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারকে ভবনের কাজ শুরুর জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন না করলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন