- সারাদেশ
- কৃষি উপকরণ ডিজেল সারের দাম বাড়ায় শঙ্কায় কৃষক
কৃষি উপকরণ ডিজেল সারের দাম বাড়ায় শঙ্কায় কৃষক
বগুড়ায় বোরো চাষাবাদ

গত বছর কোনো রকম টেনেটুনে বোরো চাষাবাদ করেছেন বগুড়া সদরের লাহিড়ীপাড়া এলাকার কৃষক দুলাল হোসেন। কৃষি উপকরণ ও ডিজেল-সারের দাম বাড়ায় এবার কীভাবে চাষাবাদ করবেন, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।
দুলাল হোসেন হিসাব কষে বলেন, এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষে খরচ হয়েছিল ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। ধান উৎপাদন হয় প্রতি বিঘায় গড়ে ২২ মণ। প্রতি মণ ধান ৮০০ টাকা দরে মোট ১৭ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করেছেন। এতে লাভ দূরের কথা; লোকসান হয়েছে ২২০০ টাকা। এবার এক বিঘা জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে তিান একটি হিসাব দেন। তাঁর বর্ণনামতে, বীজ ৫ কেজি ৬০০ টাকা, বীজ বপন ৩০০ টাকা, বীজ জমি থেকে তোলা ১০০ টাকা, জমির চারপাশে ধার ঠিক করা ৪০০ টাকা, হালচাষ ১২০০ টাকা, দুই বস্তা ইউরিয়া ২৪০০ টাকা, পটাশ এক বস্তা ১২০০ টাকা, ড্যাপ এক বস্তা ৮০০ টাকা, জিপসাম ৫০০ টাকা, গোবর সার ২৬০০ টাকা, ধানের চারা লাগানো ১০০০ টাকা, ওষুধ ৫০০ টাকা, নিড়ানি ৬ বার ২৪০০ টাকা, সেচের পানি ১৭০০ টাকা এবং ধান কাটায় খরচ ৪২০০ টাকা। এসব মিলে খরচ পড়বে ১৯ হাজার ৬০০ টাকা।
দুলাল জানান, এবার কৃষি উপকরণ, ডিজেল ও সারের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এতে ব্যয় হবে আরও গড়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে বোরো ধান ফলাতে মোট খরচ হবে ২৬ হাজার ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, ধার-দেনা করে চাষাবাদ করার পর শেষ পর্যন্ত খাওয়ার ধানও থাকে না।
পাশের গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের সাতচুয়া গ্রামের কৃষক সারোয়ার হোসেনও এমন হিসাব দেন। তাঁর কৃষিজমির পরিমাণ আট বিঘা। তাঁর মাঠের সবকিছু সম্পন্ন হয় লোক দিয়ে। তিনি জানান, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জমিতে সেচ খরচ আগের বছরের চেয়ে বিঘাপ্রতি ৫০০ টাকা বাড়বে।
সরকারের দেওয়া ভর্তুকির সার সিজনের সময় পাওয়া যায় না। বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। হালচাষের ব্যয় বাড়বে আগের চেয়ে বিঘাপ্রতি ৬০০ টাকা বেশি। বীজ এবং মজুরি বাবদ গুনতে হবে বেশি। এসব হিসাব করলে কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাপ-দাদার জমি; অন্য কোনো পেশা নেই। জমি ফেলে রাখতে মন চায় না। বাধ্য হয়েই চাষাবাদ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, চাষাবাদে খরচ হয় ধীরে ধীরে। ধান বিক্রি করে একবারে টাকা পাওয়া যায় বলে লোকসানের চাপ বোঝা যায় না।
কৃষক সারোয়ার হোসেন বলেন, তিনি প্রতি বছর স্থানীয় কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেন। ধান বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু ব্যাংকের সব ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ধানে লাভ না হওয়ায় প্রতি বছর ব্যাংকের ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ডিজেলের দাম বেড়েছে। আগে ছিল ৮০ টাকা লিটার। দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৩৪ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকা লিটার। খুচরা বাজারে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ২ টাকা। বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে ১১৬ টাকা লিটার।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় সাড়ে তিনশ গভীর নলকূপ এবং সাত হাজার ৩৫০টি অগভীর নলকূপ চলে ডিজেল দিয়ে। হাল চাষের পাওয়ার টিলারও চালাতে হয় ডিজেলে। সারের ক্ষেত্রেও দাম বেড়েছে। প্রতি বস্তা পটাশ কিনতে হয় ১৫০০ টাকায়। ইউরিয়া একই দামে কিনতে হচ্ছে। ভর্তুকির সার সময়মতো পাওয়া যায় না। গত বছরের চেয়ে সব ধরনের কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, শস্যভাণ্ডার বলে পরিচিতি এ জেলায় বোরো ধানের চাষাবাদ হয় এক লাখ ৮৭ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদন হয় সাড়ে ৯ লাখ টন। এবারও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরে বোরো চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
বগুড়া কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) এনামুল হক বলেন, লাভ-লোকসান যা-ই হোক; কৃষকরা বোরো ধান চাষাবাদ বন্ধ করেন না। কৃষি উপকরণ, ডিজেল-সারসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। তবে ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে দাবি তাঁর।
মন্তব্য করুন