দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতারা থানা পয়েন্টে আগামী ২১ জানুয়ারি সমাবেশ ডেকেছেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোশারফ মিয়াকে ক্ষমা করে দলে কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় তাঁরা এই কৃতজ্ঞতা সমাবেশ ডেকেছেন। অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেছেন, ব্যক্তি উদ্যোগে সমাবেশ ডাকার খবর জেনেছেন, এখানে দলের নাম ব্যবহার হলে জেলায়-কেন্দ্রে নালিশ করা হবে।

দিরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তবে গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতাকে ঘিরে এবং গত ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের উপজেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিভক্তি প্রকট হয়ে উঠেছে।

সংগঠনের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলতাব উদ্দিন, সদ্য সভাপতি হওয়া কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এই তিনজনই। অপরাংশের নেতা সাবেক পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়। এই দু'জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমানের। তাঁদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহেল আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক অভিরাম তালুকদারও। গত ১৪ নভেম্বর দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে কমিটি গঠন নিয়ে মতভিন্নতায় সোহেল ও অভিরাম আগের বলয় ছেড়েছেন।

সোহেল আহমদ নিজের বলয় ছাড়া প্রসঙ্গ বলেন, সভাপতি কামাল উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিই করেননি। সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে নিয়েও বিতর্ক আছে। দিরাইয়ে যারা ত্যাগী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত, তাদের নিয়ে গত শনিবার তাঁরা সভা করেছেন। এ সভা থেকে আগামী ২১ জানুয়ারি দিরাই পৌর পয়েন্টে সমাবেশ ডাকা হয়েছে।

পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া বলেন, ২১ জানুয়ারি দিরাই আওয়ামী লীগের আয়োজনেই পৌর পয়েন্টে সমাবেশ ডাকা হয়েছে। দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নেই। সম্মেলন শেষে যে কমিটি হয়েছিল, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তা অকার্যকর।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের ভাষ্য- গত ১৪ নভেম্বরের সম্মেলন যারা বানচাল করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা সমাবেশের আয়োজন করবেন বলে শুনেছেন। এটি যে কেউ করতে পারেন। কিন্তু দলের ব্যানারে এই আয়োজন হলে তাঁরা জেলা ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের কাছে বিষয়টি জানাবেন। যাঁরা এই উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। তিনি জানান, ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিধান গঠনতন্ত্রে নতুন সংযোজন হয়েছে। এটি দিরাই উপজেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তাঁরা শিগগির সংশ্নিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলায় এবং কেন্দ্রে পাঠাবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের দাবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি কামালকে নিয়ে বিতর্ক আছে। এটি সুরাহা হওয়া জরুরি। দলের বিদ্রোহী যাঁদের ক্ষমা করা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি দলীয় প্রধানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁরা সমাবেশ করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন বলেন, দিরাইয়ে দলের আয়োজনে কোনো সমাবেশের খবর তাঁর জানা নেই। কমিটি অনুমোদনে তাঁর ও সভাপতি মতিউর রহমানের স্বাক্ষর আছে। দলীয় কোনো কর্মসূচিতে যেতে হলে এ কমিটি আয়োজিত কর্মসূচিতেই যেতে হবে।

সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা জানান, বিদ্রোহীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না। অন্য কেউ কেউ ভুল বুঝেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব থাকবে না।