২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চুক্তি মতে, ওই বছরের ২৭ অক্টোবর কাজ শেষ করার কথা। দুই বছরের বেশি অতিবাহিত হলেও শেষ হয়নি কাজ। বাধ্য হয়েই নির্মাণাধীন ভবনে বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে চলছে পাঠদান। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কর্মসূচি। এ চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পান্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স সাগর কনস্ট্রাকশন। ব্যয় ধরা হয় ৮৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা। তবে বর্ধিত কাজের মেয়াদও গত বছরের জুন মাসে শেষ হয়েছে।

গত সোমবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ভবনের সামনে ও দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ইট, বাঁশ, কাঠসহ নির্মাণ সামগ্রী রাখা রয়েছে। প্রথম তলার মেঝে বালু দিয়ে ভরাট করা। দক্ষিণ পাশের দেয়ালে বাঁশের চাটাই ও টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া। বালুর মেঝেতে বেঞ্চ পেতে গণিত ক্লাস করছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। শীতল বাতাসে জীর্ণ শিক্ষার্থীরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে দেখা যায়নি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৩০ জন। শিক্ষক সাতজন। বিদ্যালয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট দুটি একতলা ভবন ছিল। একটিতে এক কক্ষে শিক্ষকরা বসেন এবং অপরটিতে পাঠদান চলে। অন্য ভবনটি ভেঙে সেখানে তিন তলা ভবন নির্মাণের কাজ
চলমান রয়েছে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন মানাজি অনন্য বলে, বালুর মধ্যে বেঞ্চ থাকায় লেখা যায় না। খোলা রুমে ঠান্ডা বাতাস লাগে। তাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার্থী শামীম ইয়াসি বলে, নোংরা পরিবেশে ক্লাসে মন বসে না।

অভিভাবক শাহাদত হোসেন বলেন, ভবনের ছাদ ও সামনে নির্মাণ সামগ্রী রাখা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ছাদে উঠে দৌড়াদৌড়ি করে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে, সে ভয়ে থাকি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম টুকু বলেন, বালুর মধ্যে বেঞ্চ দেবে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা লিখতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা বালু ছোড়াছুড়ি করে। পাঠদানে খুব সমস্যা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ে মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র একটি। নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত দুই বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়নি। বাধ্য হয়েই নির্মাণাধীন ভবনে বালু ফেলে, বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কাজ শেষ করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক জানিয়ে কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

ঠিকাদার আবু বক্কর সিদ্দিকী দাবি করেন, পুরোনো ভবন অপসারণে ১৩-১৪ মাস সময় নষ্ট হয়েছিল। এর পর করোনা ও মালপত্রের অতিরিক্ত দামে কাজ বিলম্ব হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। তিনি ফের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, নানান টালবাহানায় ঠিকাদার কাজ না করে সময় কাটান। তাঁকে আর নতুন করে সময় বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে না
ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, দ্রুত কাজ শেষ কাপশ ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।