
শেরেবাংলা নগরে ডিএনসিসির আয়োজনে হলিডে মার্কেটে দোকানিদের পসরা - সংগৃহীত
রাজধানীর সড়ক আর ফুটপাতে হকারদের দোকানের কারণে অতিষ্ঠ শহরবাসী। ফুটপাত দখলে থাকায় পথচারীরা হাঁটার জায়গা পান না। সড়কের একাংশও হকারদের দখলে থাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। অস্থায়ী এ বিক্রেতাদের উচ্ছেদে বছরজুড়েই দুর্ভোগ পোহাতে হয় দুই সিটি করপোরেশনকে। এ সমস্যা সমাধানে রাজধানীর কয়েকটি নির্ধারিত স্থানে বসছে হলিডে মার্কেট।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত আইসিটি সড়কের দুই পাশে যৌথ ব্যবস্থাপনায় ৫০টি করে মোট ১০০টি দোকান বসিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঐক্য ফাউন্ডেশন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্যের পসরায় এসব দোকান নিয়ে নতুন হলিডে মার্কেটে উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার সড়কটির উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বিস্তৃত গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে দোকান বসবে। এখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চামড়া ও পাটজাত, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন, হোম ডেকর, হস্তশিল্প, অর্গানিক কৃষিপণ্য, পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি ও খাদ্যপণ্যে সাজানো। এখানে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নার্সারি। এর পাশের সড়কেই থাকবে 'কালচারাল কর্নার'। সেখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলবে। ক্রেতাদের পরিবারের সদস্যরা এখানে মন খুলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডেই এ ধরনের মার্কেট বসানো হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এ রকম ছোট ছোট মার্কেট চালু করা গেলে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিলে তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। উদ্যোগটিতে যাতে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা না হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান তিনি।
মেয়র আতিকুল বলেন, 'অনেক উন্নত দেশে হলিডে বা ইভিনিং মার্কেট রয়েছে। এ মার্কেটে ছুটির দিনে বা সন্ধ্যার সময় স্টল বসে। সে ক্ষেত্রে ছুটির পরের দিন সকালে বা কর্মদিবসের দিনে সব ফাঁকা হয়ে যায়। এ রকম মার্কেটে বড় বিপণিবিতানের তুলনায় কিছুটা কম দামে জিনিসপত্র কেনা যায়। এটাই হলিডে মার্কেটের সুবিধা।'
আতিকুল আরও বলেন, যেসব উদ্যোক্তা এখানে এসেছেন, স্টল দিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের হাতে পণ্য তৈরি করেন। তাই এখানে ভেজাল পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
উদ্বোধনের পর থেকেই মার্কেট প্রাঙ্গণে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। বিক্রেতাদের মধ্যে নারী উদ্যোক্তাই বেশি। 'কারুশিল্প' নামে একটি দোকানের তহুরা বানু ইতি বলেন, 'আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করা হাতে বোনা পোশাক নিয়ে আমার দোকান সাজিয়েছি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের এমন সুযোগ অত্যন্ত সুন্দর। মানুষ আসছেন। নিয়মিত ও গোছালোভাবে চালানো হলে এই মেলা থেকে ভালো ফল আসবে।'
চাল, ডাল, তেল, ঘি, মধু, মসলা, শুঁটকির মতো পণ্যের পসরা নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকার জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, 'দেশীয় বিভিন্ন কৃষি ও খাদ্যপণ্য নিয়ে আমি কাজ করি। মসলার উপাদান সংগ্রহ করে নিজেরাই মসলা তৈরি করি। নিজেদের ঘানিতে সরিষা ভেঙে তেল তৈরি করি। আমাদের এখান থেকে ক্রেতারা নিরাপদ ও প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।'
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষ করা বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে এসেছেন কুব্বাত হোসাইন। তাঁর দোকানে চেরি টমেটো, বিট রুট, লেটুস পাতা, ব্রকলিসহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজি রয়েছে। তিনি বলেন, '২০০৪ সাল থেকে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। হলিডে মার্কেট তাঁদের মতো ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে একটি সেতুবন্ধ তৈরি হবে বলে তাঁর বিশ্বাস।'
এ মার্কেটে পণ্য কিনতে আসা গৃহিণী সানজিদা শরমিন বলেন, 'এখানে অর্গানিক অনেক খাবার যেমন, চা পাতা, মাশরুম, ভালো ব্যাগ, কাপড় অনেক কিছু আছে। উদ্যোগটা ভালো। ছুটির দিনে টুকটাক কেনাকাটার জন্য আসা যাবে।'
রাজধানীর মতিঝিলসহ আরও কয়েকটি স্থানে হলিডে মার্কেট রয়েছে। তবে কোথাও কোথাও এ ধরনের মার্কেটের অনুমোদন থাকলেও তাতে আগ্রহ নেই ক্রেতা-বিক্রেতার।
মন্তব্য করুন