- সারাদেশ
- বিজ্ঞজনের কথা
বিজ্ঞজনের কথা

বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবের চূড়ান্ত পর্যায়ে তরুণ তার্কিকদের উৎসাহ দিতে এসেছিলেন বিশিষ্টজন। বিতর্ক শোনার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের জন্য পথচলার পাথেয় হিসেবে তাদের বক্তব্যের চুম্বক অংশ পত্রস্থ হলো...
ড. ইফতেখারুজ্জামান
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন
নির্বাহী পরিচালক টিআইবি
বিতর্কে কেউ আসলে কখনও পরাজিত হয় না। যুক্তির ওপর ভর করে নিজের যুক্তি তুলে ধরার শিক্ষা দেয় বিতর্ক। বিতার্কিকদের আরও উৎকর্ষ অর্জনের সুযোগ রয়েছে। যুক্তিনির্ভর জ্ঞান সঠিক পথের সন্ধান দেয়। যুক্তিবাদী মানুষ দুর্নীতি করে না। সমাজ পঙ্কিলতামুক্ত থাকে। প্রত্যেকে নিজের কাছে দায়বদ্ধ থাকলে সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। দিনে একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকের আত্মজিজ্ঞাসা করা উচিত- আজ সারাদিন সে সততা ও মানবিকতার চর্চা করেছে কিনা। তরুণ প্রজন্মকে সততা ও মানবিকতার চর্চার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হবে। তর্কের খাতিরে বিতর্কে না জড়িয়ে যুক্তি দিয়ে বিচার করতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা যাচ্ছি। তরুণরাই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবে। মনে রাখতে হবে- কাউকে পেছনে ফেলে রেখে উন্নয়ন হয় না। তাই সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে উন্নয়নের পথে ধাবিত হতে হবে।
মোজাম্মেল হোসেন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সমকাল
ক্লাসের বিদ্যা আহরণের পাশাপাশি খেলাধুলা, গান-বাজনা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়। মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশও জরুরি। বিতর্ক মানে যুক্তি। আর যুক্তি মানে সত্যাসত্য বিচার করা, সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা, নিজেকে যুক্তিযুক্ত করে তোলা। নিজেকে যুক্তিযুক্ত করে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশও ঘটে। বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোও যোগ্যতার সঙ্গে উঠে আসে। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করা, দক্ষতা অর্জন করা, ভালো-মন্দ বিচার করা। বিতর্কচর্চার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্ব, জাতির বিকাশ লাভ ঘটাতে হবে। শুধু চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ হলে চলবে না, বিতর্কের মান আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে তোমাদের এখনও অবকাশ রয়েছে। এখনও দেশে, সমাজে যুক্তিবাদী মানুষ রয়েছে। তোমাদের ভালো বিতার্কিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। নিজেদের জন্য, দেশের জন্য অবদান রাখতে হবে। সমকাল শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্কচর্চার এই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা বিজ্ঞান নিয়ে নানা আয়োজন করছি, যাতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে ওঠে, কুসংস্কার থেকে দূরে থাকে। আমাদের চাওয়া, নতুন প্রজন্ম যেন সঠিকভাবে গড়ে ওঠে। অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের আন্তরিক ধন্যবাদ বিজ্ঞাননির্ভর জাতি গঠনে আমাদের সহযাত্রী হিসেবে সঙ্গে থাকার জন্য। আজকের এই আলোকিত শিক্ষার্থীরাই পারবে তাদের স্কুলকে, সমাজকে বদলে দিতে; যা তারা শিখেছে, যা বলেছে, তা যেন তারা বুকের ভেতরে ধারণ করে। আমরা শুধু কয়েকজন বিজ্ঞানী তৈরি করতে চাই না, পুরো সমাজকেই বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে চাই।
আবু সাঈদ খান
উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল
প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষের মাথা খোলে এবং বুদ্ধি খেলা করে। যে প্রশ্ন করে না, তার মাথা খোলে না। সে জীবন্মৃত হয়ে যায়। আমরা যা ভাবি, তার বিপরীতেও ভাবনা আছে। সেটি যাচাই করে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মুক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে আমাদের প্রশ্ন করা প্রয়োজন, বিতর্ক প্রয়োজন। এই বিতর্কের মাধ্যমে সমাজের অন্ধকার দূর হবে। এ জন্য আমাদের উত্তরোত্তর বিতর্কের আয়োজন করা দরকার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞান। সমাজের কুসংস্কার ও মুক্তমনা মানস গড়ে তুলতেও বিজ্ঞানমনস্কতার চর্চা খুবই জরুরি। কারণ জীবনটাই একটি সায়েন্স। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে বিজ্ঞান। বিতর্কের মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যায় এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানবিষয়ক যুক্ততর্ক অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের মনে রাখতে হবে, তর্কের খাতিরে তর্ক নয়, তর্ক হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক। আমরা এমন সুস্থ ধারার বিতর্ক চাই, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সুনাগরিক হিসেবে দেশ গড়ে তুলবে। এই যুগে এসেও আমরা খুঁজছি বিজ্ঞানের মেধাস্বত্ব কী! যেখানে সারাবিশ্ব বিজ্ঞানে অনেকটা পথ এগিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের বিজ্ঞান শিক্ষা লাভ করবে, বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে সেটি আমাদের প্রত্যাশা।
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান
প্রধান নির্বাহী, ড্যাফোডিল পরিবার
বিতর্ককে উৎসবে পরিণত করেছে এই আয়োজন। বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তিনির্ভর সমাজ গড়তে পারলেই শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। যুক্তিই পারে সমাজ ও দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে। সব সমস্যার সমাধান ঘটাতে। যে যত বেশি যুক্তিনির্ভর হয়ে চিন্তা করবে, সে তত বেশি ভালো কাজ করতে আগ্রহী হবে। যার একমাত্র মাধ্যম এই ধরনের আয়োজন।
উন্নত শিখরে পৌঁছতে হলে ব্যক্তি, সমাজ, দলমত নির্বিশেষে যুক্তিনির্ভর হতে হবে। তাহলে আমরা যুক্তিময় জাতি গড়ে তুলতে পারব। আমরা বিজ্ঞানমনস্ক, উদার, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এটি এ প্রজন্মই করতে পারবে, যাতে তারা আগামী দিনে একটি অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক, সুন্দর, যৌক্তিক, মানবিক ও নৈতিক সমাজ উপহার দিতে পারে।
অধ্যাপক মো. ফয়েজ হোসেন
অধ্যক্ষ, এনআইএসটি
বিতর্কে তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক আগ্রহ খুবই উৎসাহজনক। এমন মহৎ কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরাও নিজেদের সম্মানিত বোধ করছি। এই আয়োজন তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যা আজকের শিক্ষার্থীদের আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। বিজ্ঞান শিক্ষায় যে অনীহা ছিল তা আর নেই। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে ঝুঁঁকছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন
বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্কের এটি নবম আসর। ২০১৩ সাল থেকে এই কার্যক্রম আমরা চালিয়ে আসছি। উদ্দেশ্য একটাই- বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে তোলা। আমরা চাই তৃণমূলের প্রতিটি স্কুলে বিজ্ঞান ক্লাব, বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠায় সরকার যেন উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিত যুক্তি দিয়ে প্রাণবন্ত কথা বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মুখস্থ স্ট্ক্রিপ্ট থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিভা বিকাশে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মানসিক বিকাশ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রতিটি মুহূর্তে যে বিষয়টির সুফল আমরা ব্যবহার করি তা হলো বিজ্ঞান। আর বিতর্কের মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যায়। প্রতিভা বিকাশে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞানমনস্ক হয়েই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে এটাই প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন