এ এক অন্যরকম আনন্দ। এ আনন্দ চূড়ান্ত বিজয়ের। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভাসছেন বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব ২০২২-এর চ্যাম্পিয়ন দল, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এবারের বিজয়ের মুকুট নোয়াখালী জিলা স্কুলের। দলনেতা ফাইজুস সালেহীন সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়েছে। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেই বাঁধভাঙা আনন্দ প্রকাশ করে। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ফাইজুস সালেহীন জানায়, বিএফএফ ও সমকালকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এমন অয়োজন দ্বারা আমার মতো খুদে তার্কিকদের মেধা ও মননের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই গৌরব আমার বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষক, স্কুল ও সিনিয়র শিক্ষার্থী সবার। জেলা থেকে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় অংশ নিতে যাওয়ার, জয়ের জন্য চেষ্টা, ফাইনালের আগে রাত জেগে প্রস্তুতি নেওয়া, চূড়ান্ত ফলের আগের টানটান উত্তেজনা সবকিছুই স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে থাকবে। এ উৎসব আয়োজন আগামী জীবনে আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বিতর্ক থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছি তা দেশ ও মানবকল্যাণে আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলব। চ্যাম্পিয়ন দলের প্রথম বক্তা আশফাকুর রহমান তানজিম এবং দ্বিতীয় বক্তা তালহা মাহমুদের চোখেমুখেও ফুটে ওঠে আনন্দের ঝিলিক। তাদের মতে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমেই সাফল্যে আসে। আমরা চেষ্টা করেছি। এই বিজয় আমারসহ বাগ্‌যোদ্ধা, স্কুল এবং সমগ্র নোয়াখালীবাসীর অর্জন। আমরা সকলেই বলতে চাই, কিন্তু কেউই শুনতে চাই না। তাইতো ব্যক্তিগত, পারিবারিক- এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে রীতিমতো মহাভারত উদ্ধার করতে হয়। চায়ের দোকানে বসে সবাই কোনো বিষয়ে সমালোচনা করতে পারে। তবে পরমতসহিষ্ণু হয়ে তথ্য, যুক্তির ঝঙ্কারে অন্যকে ভুল প্রমাণ করে হাতেগোনা ক'জনই পারে আমার দেশে। ঠিক এই সত্যটি অনুধাবন করে আমি ডুব দিই বিতর্কের জগতে। পাশাপাশি জয়ের নেশা, জানার আকাঙ্ক্ষা এবং নিজেকে সকলের মাঝে তুলে ধরতেও বিতর্কের রাজ্যে প্রবেশ।
ফাইজুস সালেহীনের বাবা সহকারী অধ্যাপক হাসানুজ্জামান ছেলের এই সাফল্যে বেজায় খুশি। তিনি স্কুলশিক্ষক এবং সমকাল পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম স্মার্ট বাংলাদেশে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নিজেদের যুক্তিনির্ভর সৃজনশীল ও মুক্তচিন্তার অধিকারী করে গড়ে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস। বিতর্ক যুক্তিকে করে শানিত, বিতার্কিকদের জ্ঞানের পরিধিকে করে প্রসারিত। সমকালের এই উদ্যোগ একটি উদার, গণতান্ত্রিক ও মুক্তচিন্তার সমাজ গঠনে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
নোয়াখালী জিলা স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও বিতর্ক দলের সমন্বয়কারী মুকতুল হোসেন তাঁদের স্কুল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বেজায় খুশি। তিনি বলেন, এই বিজয় শুধু নোয়াখালী নয়, সমগ্র বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ১৬ নভেম্বর নোয়াখালী জিলা স্কুল চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম বাওয়া স্কুলকে পরাজিত করে জাতীয় পর্যায়ে যায়। জাতীয় প্রতিযোগিতায় জিলা স্কুল সেমিফাইনালে বরিশাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। সেখানে দিনাজপুর সরকারি সারদেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রথম রাউন্ডে ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস স্কুলকে পরাজিত করে। পরে ১৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ময়মনসিংহ জিলা স্কুলকে পরাজিত করে দেশসেরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
নোয়াখালী প্রতিনিধি