শীতের তীব্রতা মাড়িয়ে ভোর থেকেই প্রতিযোগীরা আসতে শুরু করে নির্ধারিত ভেন্যুতে। কেউ কেউ আবার শত মাইল পেরিয়ে এক দিন আগেই রাজধানীতে এসে পৌঁছায়। উদ্দেশ্য একটাই- চূড়ান্ত আসরে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া। জেলা পর্যায়ে বিজয়ী হয়ে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়নরা জাতীয় পর্বের চূড়ান্ত আসরে সেরা ষোলোতে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। তাদের নিয়েই সাজানো হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতীয় উৎসব। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
প্রথম দিনের শুরুতেই দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম পর্বে বিতর্ক। এ পর্বে বিজয়ীরা অবতীর্ণ হয় কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে। একযোগে চারটি ভেন্যুতে চলে প্রতিযোগিতা। 'জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো আন্তরিক নয়'- বিষয়ে বিতর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও খুলনা জিলা স্কুল এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। অন্য দুই ভেন্যুতে 'গবেষণার কাজে বাজেটের অভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে না'- বিষয়ে যুক্তির লড়াই চলে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও রাজবাড়ী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় এবং দিনাজপুরের সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের মধ্যে। যুক্তি-পাল্টাযুক্তির লড়াই শেষে বরিশাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী জিলা স্কুল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও কুমিল্লা জিলা স্কুল সেমিফাইনালে অবতীর্ণ হয় শেষ চারের লড়াইয়ে। আর মাত্র একটি ধাপ পেরোতে পারলেই ফাইনাল। সেই ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত লাড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় নোয়াখালী জিলা স্কুল ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। 'ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়নি' বিষয়ে যুক্তির শানিত তীর ছুড়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার তীব্র প্রতিযোগিতায় মেতেছিল তারা। যুক্তি ও পাল্টাযুক্তি মুগ্ধতা ছড়ায় উপস্থিত দর্শকদের মাঝে। মুহুর্মুহু করতালিতে মিলনায়তনজুড়ে তখন আনন্দের ঝিলিক। মঞ্চের সামনে বসা বিশিষ্টজন দেখছিলেন নতুন প্রজন্মের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের যুক্তিনির্ভর, গণতান্ত্রিক, মননশীল ও সৃজনশীল জাতি গড়ে ওঠার প্রচেষ্টা। শেষ দিনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিতর্কে শেষ হাসি হাসে নোয়াখালী জিলা স্কুল। চ্যাম্পিয়ন দলের দলনেতা মো. ফাইজুস সালেহীন সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়। রানার্সআপ ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, দ্বিতীয় রানার্সআপ কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং তৃতীয় রানার্সআপ হয়েছে বরিশাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শেষ দিনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ বিতর্কের মধ্য দিয়েই পর্দা নামে 'বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব-২০২২'-এর চূড়ান্ত আসরের। ফাইনালে বিতর্কের পুরো সময় অনলাইনে যুক্ত থেকে বিতর্কটি উপভোগ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এক সময়ের কৃতী বিতার্কিক এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বিএফএফের সভাপতি ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী মো. নূরুজ্জামান ও এনআইএসটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ফায়েজ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএফএফের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় সম্পাদক আসাদুজ্জামান। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক কৃতী বিতার্কিক মাজেদ আজাদ, দেবাশীষ রঞ্জন সরকার, আবদুল্লাহ আল মামুন, হাসান জাকির ও নুসরাত আমীন।
চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন বিএফএফের সভাপতি ড. ইফতেখারুজ্জামান। চূড়ান্ত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল পুরস্কার হিসেবে পায় চ্যাম্পিয়ন সম্মাননা স্মারক। এ দলের প্রত্যেক বিতার্কিক পেয়েছে ল্যাপটপ, বই, ক্রেস্ট আর সনদপত্র। রানার্সআপ দলের তার্কিকরাও দলীয় সম্মাননা স্মারক ছাড়াও পায় ল্যাপটপ, বই, ক্রেস্ট আর সনদপত্র। দুই সেমিফাইনালিস্ট দলের প্রত্যেকে পেয়েছে স্মার্টফোন, বই, ক্রেস্ট আর সনদপত্র। দিনব্যাপী আয়োজনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের সুহৃদরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম, ফরিদুল ইসলাম নির্জন, এবিএম মাহমুদুল হাসান রানা, রাসেল আল মাহমুদ, তাইম শেখ, শাহিন আলম শাওন, ইফতি, ফারহানা, ফজলুল ফাহিম, ফাহাদ আনোয়ার প্রমুখ।
চূড়ান্ত পর্বে সারাদেশ থেকে ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
বিভাগীয় সম্পাদক, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ