করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে দুই বছর পর পহেলা ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হচ্ছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এরই মধ্যে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জোরেশোরে চলছে মঞ্চ ও স্টল নির্মাণের কাজ। একই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণ ঘিরে আছে বাড়তি নিরাপত্তা এবং নজরদারিও। কারণ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবারের গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি সূত্র বলছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির মাঝের রাস্তায় অবস্থিত মেট্রোরেলের স্টেশনের কারণে এবার মেলায় স্টল সজ্জা ও আঙ্গিকে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে প্লাস্টিকের প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনের বদলে এবার পুরো মেলা চত্বরে থাকবে ডিজিটাল প্ল্যাকার্ড। আজ রোববার লটারির মাধ্যমে প্রকাশনীগুলোকে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ করতে হবে।

গতকাল শনিবার বাংলা একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, মূল মঞ্চের কাজের সঙ্গে জোরেশোরে চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও চলছে একই নির্মাণযজ্ঞ। এ দিন দুপুরে বইমেলার প্রস্তুতি কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ উদ্বোধন করবেন। এরপর মেলা পরিদর্শন করবেন তিনি। পরে মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, 'এক প্রান্তে দাঁড়ালে যেন শেষ প্রান্তেও দেখা যায় সেভাবেই এবারের মেলা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। যথাসময়ে যেন মেলা শুরু করা যায়, সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক মনিটর করছি। মেলায় সাত সদস্যের আলাদা টাস্কফোর্স থাকবে। বইমেলার জন্য নীতিমালা আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে, তাদের সেই নীতিমালা মানতে হবে। কেউ যেন নীতিমালার বাইরে না যায়, সে জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্স সদস্যদের জন্য মেলায় করা হয়েছে একটি অফিসও। টাস্কফোর্স নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।' টাস্কফোর্সের কারণে কারও মুক্তচিন্তার কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

সম্প্রতি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত স্টল বরাদ্দের তালিকা থেকে আদর্শ প্রকাশনীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'বইমেলার নিয়মনীতির বাইরে আমরা যেতে পারব না। তারা যদি নিয়মনীতি মানে, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমাদের যে সিদ্ধান্ত তা জানানো হবে। সমাজ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, জাতির পিতার বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। গত বছর আদর্শের বইয়ে আপত্তিকর কিছু বিষয় ছিল। সেসব বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে।'

জানা গেছে, এবারে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণকে ভাগ করা হয়েছে চার ভাগে। একাডেমির প্রাঙ্গণের নামকরণ করা হয়েছে এ বইমেলার উদ্যোক্তা মুক্তধারা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহার নামে। অন্যদিকে উদ্যানে থাকছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চত্বর, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা চত্বর, শেখ রাসেল শিশু চত্বর। মেলার এক প্রান্তে দাঁড়ালে দেখা যাবে অপরপ্রান্ত। গত বছর মেলার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো এ বছর আনা হচ্ছে মূল উদ্যানে। এ প্রান্তে থাকবে লেখক মঞ্চ, মুক্ত মঞ্চ, নামাজের স্থান এবং খাবারের দোকান। একাডেমির সামনের রাস্তায় মেট্রোরেলের স্টেশন থাকায় মেলার আঙ্গিকেও বড় পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার একাডেমির বিপরীতে উদ্যানে প্রবেশের ফটকটি থাকবে শুধু বের হওয়ার জন্য। তবে টিএসসির দিকের একটি ও মাঝখানের আরেকটি ফটক দিয়ে প্রবেশ এবং বের দুটিই হওয়া যাবে। মেলার প্রধান গেট থাকবে উদ্যানের রমনা কালী মন্দিরে প্রবেশের ফটক। এবারের বইমেলায় মোট ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানের ৮৫৮টি ইউনিটের স্টল ও ৩৪টি প্রতিষ্ঠানেরসহ মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। একটি প্যাভিলিয়নে হবে মুজিব কর্নার।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে এ বছর নতুন আঙ্গিক আনা হয়েছে। গত বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকের স্টল ও প্যাভিলিয়নে পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড় ছিল একেবারে কম। তাই এ বছর সব স্টল ও প্যাভিলিয়ন মূল মাঠের দিকে আনা হয়েছে। মেট্রোরেলের স্টেশনের কারণে পরিবর্তন আনা হয়েছে মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার ফটকে। এ বছর মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যানারে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও এসব ব্যানার জ্বলবে।

এদিকে ডলার ও কাগজ সংকটের মধ্যেই মেলার মূল প্রাণ নতুন বইয়ের জন্য বিভিন্ন ছাপাখানা, বাঁধাইখানা আর প্রকাশনীগুলোয় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনী সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলা ঘিরে লেখক ও প্রকাশকদের প্রস্তুতি ভালোই। কাগজের দাম বাড়তি হলেও তেমন প্রভাব পড়বে না। নতুন বই এখন ছাপাখানা আর বাঁধাইখানায়। পাঠকরা মেলা শুরুর প্রথমদিন থেকেই নতুন বই পাবেন। তারাই বইয়ের দামের মূল্যায়ন করবেন।