১৯৮০-৮১ অর্থবছরে অবিভক্ত কক্সবাজার বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন ডুলাহাজারা বনবিটের ৪৮ একর সংরক্ষিত বনভূমিতে স্থাপন করা হয়েছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। পরের ২০ বছরে প্রজননকেন্দ্রে হরিণের আশানুরূপ বংশবিস্তার ঘটেনি। ফলে বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে হরিণ প্রজননকেন্দ্রের ৪৮ একর বনভূমিসহ ২২২২ একর বনভূমি নিয়ে দেশে প্রথম সাফারি পার্ক স্থাপন করে ডুলাহাজারায়। হরিণ প্রজননকেন্দ্র বন্যপ্রাণীর বংশবিস্তার ও সংরক্ষণে ব্যর্থ হলেও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সফল হয়েছে। সাফারি পার্কটি এখন দর্শনার্থীদের বিনোদনেরও প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বন্যপ্রাণীর বংশবিস্তার ও সংরক্ষণে ডুলাহাজারা মডেল দেশে এখন বেশ জনপ্রিয়। ডুলাহাজারার আদলে দেশে পরে বেশ কয়েকটি সাফারি পার্ক গড়ে ওঠে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০-৮১ সালে হরিণ প্রজননকেন্দ্র স্থাপন করে সেখানে কয়েক জোড়া হরিণ রাখা হয়। তবে ৪৮ একর বিশিষ্ট বনভূমিতে ছিল না কোনো ঘেরাবেড়া। ফলে এখানে থাকা হরিণগুলো বেশিরভাগ শিকারিদের হাতে প্রাণ হারায়। এছাড়া হরিণ প্রজননকেন্দ্রটি আধুনিক মানের করার জন্য ছিল না প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। নামেমাত্র কয়েকজন কর্মী ছিল।
পরে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে কক্সবাজার বনবিভাগের মাধ্যমে বন মন্ত্রণালয় সাফারি পার্কের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে। ঘেরাবেড়া দেওয়া হয় সাফারি পার্কের চারদিকে। ধীরে ধীরে দেশের প্রথম সাফারি পার্কটি আধুনিক পার্কে রূপ নেয়। সম্প্রতি পার্কের বন্যপ্রাণী, পাখিশালা বেষ্টনীগুলো নান্দনিকভাবে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে পার্কে বাঘ, সিংহ, হরিণ, জলহস্তি, জেব্রা, হাতি, ভালুক, ওয়ার্ল্ডবিস্ট, বন্য গরু (স্থানীয় ভাষায় তম গরু) ও গয়াল রয়েছে। তবে নেই দেশি প্রজাতির সাম্বার ও মায়া হরিণ। এছাড়া সংকট রয়েছে বিদেশি প্রাণীর। পার্কে আফ্রিকা থেকে একজোড়া গ্রেটার কুদু আনা হলেও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারায় মারা যায়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, 'বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটিকে আধুনিক মানের করে গড়ে তোলা হয়েছে। এখন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা নান্দনিক দৃশ্য দেখে বেশ পুলকিত।' সংশ্নিষ্টদের মতে, পার্কে বিদেশি প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও দেশি বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী সংগ্রহ করা দরকার।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'অতীতে পার্কের বন্যপ্রাণীগুলো ছিল খাঁচায় বন্দি; যা সাফারি পার্কের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণী থাকবে মুক্ত আর দর্শনার্থীরা থাকবেন খাঁচায়। বর্তমানে সে লক্ষ্যেই স্থাপনাগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে; যা অচিরেই দৃশ্যমান হবে। তবে ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে অবশিষ্ট কাজগুলো পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হবে।'
এদিকে, গত ১২ ডিসেম্বর গত ১২ ডিসেম্বর গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে আনা একটি উটপাখি ডিম দিয়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি উটপাখি ৮০-১০০টি ডিম দিয়ে থাকে। গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে আরও আনা হয়েছে ২টি সিংহ, ১টি পুরুষসহ ৩টি স্ত্রী ভালুক, ১০টি ময়ূর, উভয় লিঙ্গের ৪টি উটপাখি ও ২টি ইমু পাখি, ৪টি ম্যাকাও পাখি (বিদেশি প্রজাতির)। সাফারি পার্কের ৫টি সিংহের মধ্যে রাসেল ও টুম্পা দম্পতির বয়স ১৬। তারা এখন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছে। অপরদিকে উভয় লিঙ্গের ৪টি বাঘ থাকলেও প্রজনন ক্ষমতা নেই তাদের। তাই নতুন বাঘ আনাও জরুরি বলে সংশ্নিষ্টদের অভিমত।