- সারাদেশ
- শিক্ষক ছাড়াই চলে পাঠদান নেই শ্রেণিকক্ষ, লাইব্র্রেরি
শিক্ষক ছাড়াই চলে পাঠদান নেই শ্রেণিকক্ষ, লাইব্র্রেরি

ফাইল ছবি
যুগোপযোগী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুমোদন দেওয়া হয় নতুন নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫৯টি বিভাগ এবং ছয়টি ইনস্টিটিউটে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে চালু হওয়া সাতটি বিভাগ ধুঁকছে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, সেমিনার লাইব্রেরি ও ল্যাব সংকটে। একজন কিংবা দু'জন শিক্ষক দিয়ে আবার একটি-দুটি শ্রেণিকক্ষ দিয়েই চলছে কোনো কোনো বিভাগ। বিভাগ চালু থাকার পরও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে সঠিক পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তেমনি হতাশা দেখা দিয়েছে তাঁদের মধ্যে। এসব বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এটিই তাঁদের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, বিভাগ খোলার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হয়, তা না মেনেই বিভাগের অনুমোদন দেওয়ায় সংকট তীব্র হয়েছে। ইউজিসি বলছে, এসব সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করেছে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ। করোনার কারণে সৃষ্ট সেশনজটের ফলে ছয়টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কোটাসহ প্রতিবছর আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় ৫৮ জন। তবে এই বিভাগে স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র দু'জন। নেই কোনো সেমিনার, ল্যাব ও টিচার্স চেম্বার। মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষে চলে পাঠদান। বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বিভাগের অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে চালানো হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম।
২০১৪-১৫ সালে চালু হয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে কোটা বাদে ৪০টি। কোটাসহ আসন ৪৫টির মতো। বিভাগটির পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে চারটি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিভাগটিতে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক থাকলেও এর মধ্যে দু'জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে। ফলে ২০টি কোর্স পড়াতে হয় মাত্র তিনজন শিক্ষককে। এ বিভাগটিতে নেই সেমিনার লাইব্রেরি। ২০২০ সালে অনুমোদন পায় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। এ পর্যন্ত মাত্র দুটি ব্যাচে কোটাসহ ৩৬ জন করে ভর্তি করা হয়েছে। বিভাগের জন্য তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও তিনজন শিক্ষক রয়েছেন।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হয় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ। বিভাগে বর্তমানে সাতটি ব্যাচ রয়েছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় আট বছর হলেও এখনও শিক্ষক পায়নি বিভাগটি। প্রতি ব্যাচেই প্রায় ৩৪ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র দুটি। অতিথি শিক্ষক দিয়েই চালাতে হয় পাঠদান।
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হয় ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগ। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিভাগে শিক্ষক আছেন সাতজন। এর মধ্যে তিনজনই শিক্ষা ছুটিতে। এ বিভাগে ল্যাব থাকলেও নেই সেমিনার লাইব্রেরি।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে ছয়টি ব্যাচের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ছয়জন। এর মধ্যে দু'জন ছুটিতে। ফলে চারজন শিক্ষক ও অতিথি শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিভাগের জন্য একটি ল্যাব থাকলেও তার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন বিভাগটির সভাপতি ড. শরিফুল ইসলাম। রয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকটও।
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, 'দুজন শিক্ষক দিয়ে একটা বিভাগ কীভাবে চলতে পারে? অন্য বিভাগের শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হয়। সেমিনার ও ল্যাব নেই। সংকট সমাধান করতে না পারলে বিভাগ অনুমোদন দেওয়া হয় কেন? আমরা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে কম সুবিধা নিয়ে পড়ালেখা করছি।'
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক রাইসুল ইসলাম বলেন, বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার ও ল্যাব নেই। শিক্ষকদের জন্য চেম্বারও নেই। অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে কার্যক্রম। শিক্ষক কম থাকায় উপযুক্ত শিক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিল ভূঞা বলেন, নীতিমালায় একজন সহকারী অধ্যাপকের সপ্তাহে ১২ ঘণ্টা ক্লাস নেওয়ার বিধান রয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ২১ ঘণ্টা ক্লাস নিতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, একটি বিভাগ চালু করার আগে কিছু বিষয় ভাবনায় রাখতে হয়। কারা পড়াবেন, শিক্ষার্থীরা কোথায় ক্লাস করবে, সেমিনার, ল্যাব এসবের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা। কিন্তু এসব বিষয়ের ব্যবস্থা না করেই বিভাগ অনুমোদন ও চালু করা হয়। এতে করে ভুক্তভোগী হয় শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সংকটগুলো আমাদের নজরে এসেছে। সমাধানে প্রশাসন কাজ করছি। আগের প্রশাসনের মাৎস্যন্যায়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে চাইলেও এখনই শিক্ষক সংকট সমাধান করা সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০ শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে।
মন্তব্য করুন