গ্যাসের সংযোগ পেতে টাকা জমা দিয়ে ১০ বছর ধরে অফিসে অফিসে ঘুরছেন চট্টগ্রামের অনেক মানুষ। গ্যাস সংযোগের জন্য বিভিন্ন সময়ে ২২ হাজার প্রার্থীর কাছ থেকে ডিমান্ড নোটের টাকা নিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)। কিন্তু সংযোগ দিতে পারেনি।

আবাসিক ভবনে নতুন সংযোগ ও চুলার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা জমা নিয়েছে কেজিডিসিএল। সরকারি সিদ্ধান্তে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন টাকা জমা দেওয়া এই আবেদনকারীরা। সরকারি সিদ্ধান্তের আগে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়ে কেন গ্যাস পাবেন না এই প্রশ্ন তাঁদের।

টাকা জমা দেওয়া লোকজন মাঝে মাঝে কেজিডিসিএলের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু সদুত্তর পান না। অনেক কর্মকর্তা তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতেই চান না। কোনো কোনো সময় পেট্রোবাংলায় গিয়ে উত্তর জানতে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তাঁরা।

ক্ষুব্ধ এ আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে রিট করা হয়। চট্টগ্রাম গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির গ্রাহক ঐক্যজোটের সভাপতি আলমগীর নূর, মহাসচিব এ কে এম অলিউল্লাহ হক ও মো. নুরুল আলম উচ্চ আদালতে রিট করেন। তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

নগরীর বাদুড়তলা এলাকার বাসিন্দা আকবর নেওয়াজ একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে জমি দিয়ে ভাগাভাগিতে ১০তলা ভবন করেছেন। এই ভবনে গ্যাসের সংযোগ পেতে ২০১৪ সালে কেজিডিসিএলে আবেদন করেন এবং টাকা জমা দেন। কিন্তু সংযোগ পাননি। আকবার নেওয়াজ সমকালকে বলেন, 'সরকার আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ ঘোষণার আগেই আমরা ডিমান্ড নোটের টাকা দিয়েছি। গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এদিকে ফেরতও দেওয়া হচ্ছে না ডিমান্ড নোটের টাকা'।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন সমকালকে বলেন, 'সিলিন্ডার গ্যাস প্রাপ্তি যতটা সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তাই গ্রাহক পাইপলাইনের গ্যাস পাওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কর্ণফুলী কোম্পানি ডিমান্ড নোট বাবদ টাকা নেওয়ায় তাদের উচিত গ্যাসের সংযোগ দেওয়া। কোনো কারণে সংযোগ দেওয়া না গেলে লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত দেওয়া প্রয়োজন।'

তবে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল আজম খান বলেন, 'সরকারি সিদ্ধান্তে আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে কোম্পানির কোনো হাত নেই। এ নিয়ে গ্রাহকদের দায়ের করা মামলা চলছে। আদালত যে নির্দেশনা দেন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেব। কোনো গ্রাহক চাইলে ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত নিতে পারবেন।'