দেশে ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। অবহেলা বা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় এ রোগে আক্রান্তের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। দেশের ৯ জেলা সংক্রামক এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে শনাক্ত ও সুচিকিৎসা পেলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত বছর দেশে ২ হাজার ৯৭৪ জনের কুষ্ঠ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ২০০ জন প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন। ২০২১ সালে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৭২। তাঁদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন ১৬৫ জন। ২০২০ সালে ২ হাজার ৭২৪ রোগীর মধ্যে প্রতিবন্ধিতার শিকার হন ১৩৭ জন। তবে ২০১৯ সালে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ওই বছর ৩ হাজার ৬৩৮ জনের কুষ্ঠ শনাক্ত হয়। প্রতিবন্ধিতার শিকার হন ২৫২ জন।

১০ বছর ধরে দেশে বছরে গড়ে তিন হাজার কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো- মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও মেহেরপুর। এসব জেলায় প্রতি লাখে পাঁচজন বা তার বেশি মানুষ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকাসহ ছয় জেলা। নিম্ন ঝুঁকিতে আছে আরও ৩৪টি জেলা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্ঠ রোগী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না। কেউ কেউ কবিরাজসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। এসব কারণে সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে সময় লাগে। ততদিনে রোগ অনেক দূর গড়ায়। এতে অনেকেই প্রতিবন্ধিতার শিকার হন। এ বিষয়ে মানুষের মাঝে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। কুষ্ঠ রোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য- 'এখনই কাজ শুরু করি, কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করি'। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে সকাল ১০টায় র‌্যালি বের করা হবে। এর পর অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো দেশে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা প্রতি ১০ হাজারে একজনের নিচে নেমে এলে দেশটিকে 'কুষ্ঠ রোগমুক্ত' ঘোষণা করা যায়। সেই হিসেবে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ 'কুষ্ঠ রোগমুক্ত' দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনও প্রতি বছর বহু মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরোনো কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ আইনটি ২০১১ সালে সংশোধন করে সরকার। পুরোনো আইনে এ রোগে আক্রান্তদের বাধ্যতামূলক সরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হতো। বর্তমান আইনে তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীর ৩০ শয্যার কুষ্ঠ হাসপাতালে ১৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এখানে নতুন শনাক্ত রোগী ভর্তি রাখা হয় না। কুষ্ঠ-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে কেউ এলে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও দুটি হাসপাতাল পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনায় দেশে আরও ২০টি হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে।

৩০ শয্যার কুষ্ঠ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা সমকালকে বলেন, কুষ্ঠ রোগ বংশগত নয়, এটি মৃদু সংক্রামক রোগ। ১০০ জন রোগীর মধ্যে ২০ জন রোগী সংক্রামক। কুষ্ঠ রোগ বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে রোগী চিকিৎসার আওতায় এলে জীবাণু ছড়ায় না। চিকিৎসা নিতে দেরি হলে রোগীর হাত-পা-চোখসহ বিভিন্ন স্থানে বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। অনুভূতিহীন হালকা ফ্যাকাসে অথবা সাদাটে দাগ, চামড়ায় গুটি বা দানা, কানের লতি মোটা হওয়া- এসব কুষ্ঠ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। ডা. সোহেল রানা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে কুষ্ঠ সম্পূর্ণ নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি অর্জনে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।

জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও উপপরিচালক ডা. ইউনূস আলী সমকালকে বলেন, কুষ্ঠ রোগ নিয়ে সমাজে এখনও বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে। এ কারণে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেলেও মানসিক ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হওয়ার ভয়ে রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে আসেন না। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রোগীদের শনাক্ত করা হয়। বিশেষ করে দেশের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার।