মিসিসিপি রাজ্যে মার্কিন পুলিশের বর্বর নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক টায়ার নিকোলসের মৃত্যুর ঘটনায় মেম্ম্ফিস পুলিশের বিশেষ বাহিনী 'স্করপিয়ন' ইউনিট স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় উঠলে শনিবার এই সিদ্ধান্ত নেন পুলিশপ্রধান। এই সিদ্ধান্তকে ন্যায়সংগত বলে উল্লেখ করেছেন নিহতের পরিবারের আইনজীবীরা। একই সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরাও। খবর এএফপির।

শনিবার এক বিবৃতিতে মেম্ম্ফিসের পুলিশপ্রধান সেরিলিন সিজে ডেভিস বলেন, সবার স্বার্থেই স্করপিয়ন ইউনিটকে স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। কয়েক সদস্যের হীন কর্মকাণ্ড ইউনিটকে অসম্মান করেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিহত নিকোলসের পরিবার, আত্মীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান। ডেভিস নিজেও কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি মেম্ম্ফিস পুলিশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রধান। ২০২১ সালে প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হওয়ার পর পুলিশ বাহিনীতে তিনি ব্যাপক সংস্কার এনেছিলেন।

অবশ্য ভিডিও প্রকাশের দিন গত শুক্রবার ওই নির্যাতনকে জঘন্য কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করলেও শাখাটি বিলুপ্ত না করার পক্ষে ছিলেন তিনি। গোটা ইউনিটই এই ধরনের মন্দ কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয় বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। ইউনিটে সংস্কার আনার কথা জানিয়েছিলেন ডেভিস। কিন্তু এর পরের দিনই বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন।

প্রায় ৩০ জন পুলিশ অফিসারের তিনটি দল নিয়ে গঠিত এই ইউনিট। এটির উদ্দেশ্য, শীর্ষ অপরাধের অঞ্চলে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের ধরা। অবশ্য ৭ জানুয়ারি নিকোলসের ওপর নির্যাতন ও পরে মৃত্যুর পর থেকেই শাখাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এদিকে, নিকোলস পরিবারের আইনজীবী বেন ক্রাম্প ও অ্যান্তোনিও রোমানুচি বলেছেন, ইউনিট বিলুপ্তি বিচার প্রক্রিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

এই ধরনের বর্বর আচরণ শুধু এই বিশেষ বাহিনীতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর বিস্তৃতি দীর্ঘ বলেও মনে করেন তাঁরা। ওই নির্যাতনে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারাও কৃষ্ণাঙ্গ। ওই পাঁচজনকে বহিস্কার করা হয়েছে। এখন তাঁরা কারাগারে। খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের ৬০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। পুলিশপ্রধান জানিয়েছেন, শুধু এই পাঁচজনই নন, অন্য অফিসারদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। এদিন নিকোলস কী করেছিলেন, এর চেয়ে তাঁর ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়টিই এখন গুরুত্বপূর্ণ।

নিকোলসের সৎবাবা রডনি ওয়েলস বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে পরিবার। যেসব কর্মকর্তা নিকোলসকে বাঁচাতে এগিয়ে না এসে হত্যায় সহযোগিতা করেছেন, তাঁরাও সমান অপরাধী।

নির্যাতনের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় নিকোলস হত্যার বিচার দাবি ও পুলিশের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে দেশজুড়ে রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষুব্ধ মার্কিনিরা। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ সবাই। একসুরে নিন্দার পাশাপাশি তাঁদের স্লোগান 'পুলিশের সন্ত্রাস' বন্ধ করো।

তবে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হলেও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। মেম্ম্ফিসে বিক্ষোভকারীরা মিসিসিপি নদীর ওপর নির্মিত সেতু অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে, নিউইয়র্ক সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং পোর্টল্যান্ড, ওরিগনেও যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

গত ৭ জানুয়ারি রাতে ট্রাফিক আইন অমান্য করার অভিযোগে প্রাইভেটকার থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিকোলসের ওপর নির্মম নির্যাতন চালান পুলিশ কর্মকর্তারা। টানা প্রায় ২৫ মিনিট নির্যাতনের এক পর্যায়ে নিকোলস নিস্তেজ হয়ে পড়লেও হাসপাতালে না নিয়ে সড়কেই ফেলে রাখে পুলিশ। তিন দিন পর হাসপাতালে মারা যান তিনি।