- সারাদেশ
- ভাড়া ওঠে লাখ টাকা, জমা ১৩ হাজার
ভাড়া ওঠে লাখ টাকা, জমা ১৩ হাজার

বরিশাল নগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা নতুন বাজার সড়ক। এর বিস্তৃতি জেলেবাড়ি সেতুর মোড় পর্যন্ত। এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) মালিনাকাধীন ২০টি টিনশেড স্টল রয়েছে। ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা জানান, স্টলভেদে গড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিচ্ছেন তাঁরা। এতে মোট আদায় অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় লাখ টাকা। অথচ দিনের পর দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব স্টল থেকে মাসিক আয় দেখাচ্ছে মাত্র ১৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি স্টলের ভাড়া উঠছে মাত্রা ৬৫০ টাকা। ফলে ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী অবশিষ্ট টাকা কোথায় যাচ্ছে, এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
কলেজের মূল ক্যাম্পাসের বাইরে সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাসের জমিতে স্টলগুলো নির্মিত হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নতুন বাজারের পূর্ব দিকে মরহুম জবান আলী খানের বাড়ির সীমানা থেকে জেলেবাড়ির পুল মোড় পর্যন্ত ২০টি স্টলে রয়েছে খাবার হোটেল, সেলুন, স্টেশনারি, মুদি মনিহারি ও চায়ের দোকান। শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক আল আমিন সরোয়ার স্টলগুলোর ভাড়ার টাকা তোলেন। কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়ার দাবি, সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় তাঁরা ভাড়ার টাকা পাচ্ছেন না। ছাত্রাবাসের মসজিদের জন্য কিছু টাকা নিচ্ছেন।
তবে বিএম কলেজ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সদস্য হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তিনি জানান, সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাসের সম্পত্তি নিয়ে আপাতত কোনো মামলা নেই। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আদালত কলেজের পক্ষে রায় দিয়েছেন। 'খ' তপশিলের সম্পত্তি বিধায় জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ইজারা নিয়ে পুরো সম্পত্তি কলেজের দখলে রয়েছে।
জানা যায়, সুরেন্দ্র ভবনের এক একর ৬০ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে মৃত জবান আলী খানের পরিবারের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রায় ৫০ বছর আইনি লড়াই চলে। মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে বহু বছর আগে প্রধান সড়কের পাশে টিনশেড স্টল নির্মাণ করে জবান আলীর পরিবার। ১০ বছর আগে স্টলগুলো কলেজ কর্তৃপক্ষ দখলে নেয়। ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে সহকারী অধ্যাপক আল আমিন সরোয়ার স্টলগুলোর ভাড়া তোলেন ও কলেজ তহবিলে জমা দেন। তিনি জানান, মামলার রায় তাঁদের পক্ষে হলেও আগে যাঁরা দোকানঘর তুলেছেন, তাঁরাই ভাড়া নিচ্ছেন। মামলা চলাকালে বহু বছর আগে দখলদাররা ঘর তুলেছিলেন। এখন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেবল ভিটার ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
তবে ভাড়াটিয়ারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা জানান, ঘরের প্রকারভেদে তাঁরা সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ রসিদ দিচ্ছে ৫০০ টাকার। কলেজের কর্মচারীরা এসে তাঁদের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা নিয়ে যান। ব্যবসায়ীরা প্রমাণ হিসেবে আল আমিন সরোয়ারের স্বাক্ষর করা ৫০০ টাকার রসিদও দেখান।
এ প্রসঙ্গে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়া বলেন, সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাসের সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। ইজারা সূত্রে মূল ছাত্রাবাস দখলে আছে। তবে সড়কের পাশের স্টলগুলো অনেক বছর আগে কারা নির্মাণ করেছে, তা জানা নেই। যারা ঘর তুলেছে, তারাই ভাড়ার টাকা নিচ্ছে। আল আমিন সরোয়ারের স্বাক্ষরযুক্ত রসিদে ৫০০ টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসের জমিতে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। মসজিদের জন্য টাকা তোলা হয়। এ টাকার পরিমাণ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা হতে পারে। এর কিছু অংশ সরকারি কোষাগারেও জমা পড়ে।
মন্তব্য করুন