নাম হামিদুল ইসলাম। পেশায় ভ্যানচালক। তার একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি)  ইংরেজি বিভাগে সুযোগ পেয়েছেন। ছেলের বই কেনাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ মেটাতে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বেটারিচালিত ভ্যানটি বিক্রি করে দেন বাবা হামিদুল ইসলাম। বিষয়টি জানাতে পেরে হামিদুলকে নতুন একটি ভ্যান উপহার দেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটি ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হামিদুল। 

বুধবার হামিদুলকে ভ্যানটি দেওয়া হয়। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দীপঙ্কর রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।  

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে ১০ হাজার টাকার সহায়তা পান হামিদুল। 

হামিদুল ইসলামের বাড়ি উপজেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায়। মাত্র দুই শতাংশের ভিটেমাটিতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে হামিদুলের বসবাস। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই তার। ছেলের মতো একমাত্র মেয়েও বেশ মেধাবী।

শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও লেখাপড়ায় আগ্রহ দেখে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন হামিদুল। কিন্তু আর্থিক অনটন তার বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কর্মসংস্থানসহ ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার খরচ জোগানোর সহায়তার আশ্বাসে সাহস পেয়েছেন হামিদুল।

ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়ে টাকার জন্য দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর স্থানীয় এক বন্ধুর পরামর্শে জেলা প্রশাসনের গণশুনানিতে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করি। পরে ভর্তির জন্য তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ডিসি স্যার আমার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছেন। আমার স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করার জন্য সারা জীবন ডিসি স্যারের কাজে কৃতজ্ঞ থাকবো।

ভ্যানচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, আমার দুই ছেলে-মেয়ে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো ছিল। স্কুলের শিক্ষকরাও বলতেন। এজন্য তাদের খরচ জোগাতে আমি ভ্যান বিক্রি করে দেই। পরে একটি ভাড়ায়চালিত ভ্যান দিয়ে মালিককে ভাড়া পরিশোধ করে দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকায় আয় করতাম। এ আয় দিয়ে দুই বেলা খাবারও জুটতো না। গণশুনানিতে আমার সব কথা শুনে ডিসি আর আমাকে আবারও একটি ভ্যান কিনে দেন। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় গড়ে তুলতে তিনি আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য

প্রতি বুধবার গণশুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন ভ্যানচালক হামিদুলের মতো অনেকেই আসেন নানা সমস্যা নিয়ে। বিশেষ করে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী আসেন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তিসহ বই কেনার আর্থিক সাহায্যের জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমার চেষ্টা থাকে মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা ও দুস্থদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। প্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুদান, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দসহ জেলা প্রশাসক শিক্ষা বৃত্তি থেকে এসব গরিব মেধাবী ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা করা হয়। এটা আসলে সেই অর্থে জনসেবা না বলে জেলা প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক বলতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।