রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীতে চুরির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার শিকার দুই নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ মর্গে রয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। নিহতরা হলেন, নওগাঁর মান্দার সগুনিয়া গ্রামের সামাদের ছেলে রেজাউল করিম (৪৫) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার গোলাম মোস্তফার ছেলে রাকিব (৩৫)। তারা রাজশাহীর বসুয়া কদমতলা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। 

নিহতের খবর পেয়ে রাত একটায় বোয়ালিয়া থানায় ছুটে যান রাকিবের স্ত্রী সোমা ও রেজাউলের স্ত্রী নার্গিস। আহাজারি করতে করতে সোমা বলেন, ‌‘বিকেলে রাকিব ফোন করে বলেছিল কেবা যেন বন্দি করে রাখছে। পরে ফোন কেড়ে নেয়। আর যোগাযোগ হয়নি। আমি এখন কিভাবে বাঁচবো? আমিও মরে যাব। আমার দুই শিশু কন্যাকে কে দেখবে? কে খাওয়াবে? রাকিব ছাড়া আমার চাল-ডাল কেনার কেউ নাই।’

রেজাউলের স্ত্রী নার্গিস বলেন, ‘আমার স্বামী সকাল সাতটায় কাজে বের হয়ে যায়। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। রাত ১০টায়ও স্বামী না আসায় ফোন দিই। ফোন রিসিভ হয় না। তখন রাকিবের বউ এসে খোঁজ করে। আমি তখনও স্বামীর অপেক্ষায়। স্বামী চাল-ডাল নিয়ে এলে রান্না করবো। তখন পুলিশ ফোন করে ডেকে নেয়। এখনও রান্না হয়নি। ছোট ছোট বাচ্চাদের খাওয়া হয়নি। চাল-ডাল নিয়ে স্বামী আর ফিরে আসলো না, রান্না খাওয়াও হলো না। এখন শুনছি আমার স্বামীকে ওরা খুন করেছে। আমি এদের বিচার চাই।’

পুলিশ এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন, মডার্ন ফুড কোম্পানির মালিক আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুল্লাহ (৩৮), তার শশুর মাসুম রেজা (৫০), কর্মচারী ইমরান (২১) ও মইনুদ্দীন রিয়াল (১৯)। 

পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের ডেপুটি কমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, আব্দুল্লার কারখানা সংলগ্ন বাড়িতে তারা নির্মাণ কাজ করছিল। বাড়ি থেকে তাদের কিছু টাকা চুরির অপবাদ এনে দুপুরে রেজাউল ও রাকিবকে আটক করে নির্যাতন করে। এ সময় তাদের হাত পায়ের নখ তুলে নেওয়াসহ নির্মমভাবে নির্যাতন করে। খবর পেয়ে রাত সোয়া ৯টায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে গুরুতর আহত দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় এবং জড়িত চারজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে।

রেজাউল ও রাকিবকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজনকেও মৃত ঘোষণা করা হয়।