করোনার প্রভাব মোকাবিলার পর নতুন এক সংকটের মুখোমুখি পোশাক খাত। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করেছেন ক্রেতারা। চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে। তখন আরও বেশি রপ্তানি আদেশ স্থগিত হবে। বাণিজ্যিক রাজধানীতে ৬৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ২৯০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, তাদের সদস্যভুক্ত ৩ হাজার ৭৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ হাজার ৪২৬টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২ হাজার ৩১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৭৭০টি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নিয়োজিত। চট্টগ্রামে এখন ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৮০টি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নিয়োজিত।
একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে থাকায় চট্টগ্রামে পোশাক খাতের অবদান ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। বিজিএমইএর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠান ছিল ৭টি। এক দশক পরে এ সংখ্যা হয় ১৪। ২০০৫ সালে পাঁচ গুণ বেড়ে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯টিতে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা আরও চার গুণ বেড়ে হয় ৩০১। ২০২০ সালে চট্টগ্রামে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হয় ৪০০। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৯০। ১৯৮৫ সালে ১৩৩টি চালু গার্মেন্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান দিয়ে জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রাম অবদান রেখেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালে এসে এ অবদান নেমে আসে ১৬ শতাংশে।

বাণিজ্যিক রাজধানীতে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমে কমার নেপথ্যে আছে নানা কারণ। তার মধ্যে একটি অর্থায়নের সমস্যা। এ সমস্যা বিনিয়োগ বাড়ানোর পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা উদ্যোক্তারা ঋণ গ্রহণের সময় বিধিনিষেধের আওতায় থাকেন। লিমিট কম থাকায় ব্যাংকাররা দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। সিদ্ধান্তের জন্য রাজধানীতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই অন্তত কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে স্থাপন করার দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ডিএমডি পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চট্টগ্রামে পদায়ন করা জরুরি বলে মনে করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের মতে, বন্দর ও কাস্টমসে শুল্ক্ক-সংক্রান্ত কার্যক্রম আরও সহজ করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।