- সারাদেশ
- চসিকে ঠিকাদারি মানেই ভাগাভাগি
চসিকে ঠিকাদারি মানেই ভাগাভাগি

চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে নগরের যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেকটিং (পিসি) সড়ক। ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির একাংশের কাজ পান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আহমদের মালিক জাকির হোসেন। তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা না থাকার পরও ৫০ কোটি টাকার ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পান তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) থেকে। জাল কাগজপত্র তৈরি করে এই কাজের বিপরীতে ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নেন ৪৭ কোটি টাকা। তবে কাজ শেষ না করে মাঝপথে পালিয়ে যান জাকির হোসেন। পরে বাড়তি ৭ কোটি টাকায় নতুন আরেকজন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করে চসিক। ২০১৯ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এতদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা লোকজনকে পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এ-সংক্রান্ত এক মামলায় সম্প্রতি জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুধু জাকির হোসেন নন, এমন অনেকে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে কাজ পাচ্ছেন চসিকে। একই সড়কের আরেকাংশের কাজ পাওয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম ও মইনুদ্দিন বাঁশিও মাঝপথে কাজ রেখে চলে যান। ৩০ বছর ধরে এভাবেই ঠিকাদারিতে অযোগ্য অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরে। যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর) অনুযায়ী কাজ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই কাজ হয়েছে ভাগবাটোয়ারায়। পছন্দের ঠিকাদারদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া এমন কাজ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার।
সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি যে টেন্ডার নিয়ে চসিকে মারধর করা হয়েছে প্রকল্প পরিচালককে; সেটিতেও চার ঠিকাদার পেয়েছেন ৩৭ লটের কাজ। ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে রেটিং করায় এবার ৩৭টি লটের কাজে রুকনউদ্দিন নামে এক ঠিকাদারের ইকবাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ২২টি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের দি কনস্ট্রাকশন ট্রেড চারটি এবং কাশেম কনস্ট্রাকশন আটটি ও আরেকটি প্রতিষ্ঠান চারটি কাজ পেয়েছে। ২২০ কোটি টাকার এসব কাজের চূড়ান্ত চিঠি এখনও দেওয়া না হলেও আগেভাগে এটি জানতে পারায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে অন্য ঠিকাদারদের মধ্যে।
অনিয়মকেই 'নিয়ম' মেনে টেন্ডার দিয়েছেন চার মেয়র: ৩০ বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র হয়েছেন চারজন। তাঁরা সবাই অনিয়মকে নিয়ম মেনে পরিচালনা করেছেন কার্যক্রম। যোগ্যতাকে কাজ পাওয়ার প্রধান শর্ত হিসেবে দেখেননি তাঁরা। সরকারি বিধি না মেনে কাজ ভাগাভাগি করে দিতেন ঠিকাদারদের। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কাজের মানও। চসিকে প্রথম রাজনৈতিক মেয়র নির্বাচিত হয় ১৯৯৪ সালে। তখন থেকে টানা তিন দফা মেয়র ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (প্রয়াত)। তাঁর ১৭ বছরের মেয়াদে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ২০১০ সালে মেয়র নির্বাচিত হন এম মনজুর আলম। তাঁর পাঁচ বছরে ৯০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। বর্তমান মেয়রের দুই বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।
ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি আসলে কী: সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, ঠিকাদারদের জমা দেওয়া দর একই হয়ে গেলে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে রেটিংয়ের ভিত্তিতে কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তিন দশকের নিয়ম ভেঙে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ৩৭ লটের টেন্ডারে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি অনুসরণ করেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী। ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে আছে পয়েন্ট পদ্ধতি। গত পাঁচ বছরে চসিকের প্রকল্পে শেষ করা কাজের সংখ্যা (১৪০ পয়েন্ট), পাঁচ বছরে করা কাজের অর্থ মূল্য (১০০ পয়েন্ট) এবং সব সরকারি সংস্থায় চলমান কাজের মোট মূল্য (৬০ পয়েন্ট) ধরে গণনা করা হয়। ঠিকাদারদের অভিযোগ, ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে দরপত্র মূল্যায়ন হলে ই-টেন্ডারে বড় ঠিকাদারই বারবার কাজ পাবেন। ছোট ঠিকাদারদের কাজ পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই: সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, জাইকার অর্থায়নে নগরীর ৭৫ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি স্থাপনে চারটি প্যাকেজে ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় এইচটিএমএস লিমিটেডকে ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপবিভাগ। কাজটি এইচটিএমএস পেলেও উপঠিকাদার হিসেবে কাজ করে ট্রেড ম্যাজিস্টিক নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশনের ১৩তম সাধারণ সভায় অভিযোগ করা হয়, প্রকল্পের ঠিকাদারের স্থাপিত বৈদ্যুতিক পোল, কেবল, লাইট এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিম্নমানের। এমন অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন ও টেস্ট রিপোর্ট যাচাই করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, 'স্থাপিত কেবলের মান মোটেও সন্তোষজনক নয়। বৈদ্যুতিক পোলে ওয়েলডিং না করে একক পোল হওয়া উত্তম ছিল। সার্বিক বিবেচনায়, সরবরাহ করা পোলের কেবলের গুণগতমান অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে তা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হলো। গুণগতমান সম্পন্ন কেবল সাপ্লাই না দেওয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাস করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।'
ঠিকাদারের সঙ্গে প্রকৌশলীর আঁতাতের অভিযোগ: নিয়মানুযায়ী যে কোনো কাজের একটি প্রাক্কলিত দর ঠিক করে সিটি করপোরেশন। এই দর গোপন থাকার কথা। এ থেকে নূ্যনতম ১০ শতাংশ কম বা বেশি দরদাতাতের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাছাই করার কথা চসিকের। কিন্তু এই প্রাক্কলিত মূল্য সিটি করপোরেশনের কিছু প্রকৌশলী আগেই ঠিকাদারদের ফাঁস করে দিতেন। তাই সবার দর সমান হয়ে যেত। তখন ভাগাভাগি করে কাজ দিতেন মেয়র। একবার কেউ একটি কাজ পেলে পরেরবার অন্যজনকে সুযোগ দিতেন। এভাবেই যোগ্যতার চেয়ে পছন্দ বেশি গুরুত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সিটি করপোরেশনে প্রকৌশলীদের সঙ্গে ঠিকাদারদের এমন আঁতাত প্রকাশ্যেও এসেছে অনেকবার। সিটি করপোরেশনের তদন্তে নিম্নমানের কাজে অভিযুক্ত এমন ঠিকাদারকে ভারতীয় অর্থ সহায়তায় ২৬০ কোটি টাকায় নেওয়া 'মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চিটাগাং সিটি করপোরেশন' প্রকল্পে উপঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে প্রকল্পটির পরিচালক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে। উপঠিকাদার হিসেবে যে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়েছে তার মধ্যে অভিযুক্ত ট্রেড ম্যাজিস্টিক লিমিটেডও রয়েছে। এ ছাড়া অন্য দুই প্রতিষ্ঠান হলো- এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স ও প্রোটোস্টার লিমিটেড। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালক ট্রেড ম্যাজিস্টিককে কাজ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ অন্য ঠিকাদারদের। তবে ঝুলন কুমার দাশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো তদন্ত প্রতিবেদনকে 'কথিত তদন্ত প্রতিবেদন' উল্লেখ করেন। এই তদন্তে তথ্যগত ভুল আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রতিবেদনের গুণগতমান নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে এর আগে ১৩৪ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে যারা: ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি 'চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন' শীর্ষক একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। শুরুতে প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি ২৯ কোটি টাকার ১১টি লটে দরপত্র আহ্বান করেন। এর মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়া হয় কাজগুলো। গত বছরের ১৪ জুলাই রফিকুল ইসলামকে বাদ দিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়বকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। তিনি ১০৫ কোটি টাকার ২৬টি লটের দরপত্র আহ্বান করেন। এর মধ্যে ১২টি দরপত্রের কাজ লটারির মাধ্যমে, ১৩টি সমঝোতার মাধ্যমে ও একটি সিটি করপোরেশনের ঈদে মিলাদুন্নবী আয়োজনে অর্থায়ন করায় পছন্দের ঠিকাদারদের ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়া হয়।
ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছেন যেসব প্রতিষ্ঠান: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বড় কাজগুলো পেতেন মেয়রের পছন্দের ঠিকাদাররা। ভাগাভাগি করে সবাইকে কাজ দেওয়া হলেও শুভঙ্করের ফাঁকি থাকত পছন্দে। ভাগ্যবান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতন- মেসার্স ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স ফাহিমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স ব্রাদার্স অ্যাসোসিয়েটস, আবীর এন্টারপ্রাইজ, একে সিন্ডিকেট, মেসার্স কনস্ট্রাকশন, দি কনস্ট্রাকশন ট্রেড, ইকবাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ও প্রগতি এন্টারপ্রাইজ। ১৩৪ কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারাতে ভাগ্যবান ঠিকাদাররা হচ্ছেন- মেসার্স মনির আহমেদ, মেসার্স শাহ আমানত সিন্ডিকেট, মেসার্স প্রগতি এন্টারপ্রাইজ, এসএএল-আরএনএস (জেভি), আরআর-রাজ (জেভি), মেসার্স ফুলমতি ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স এএন ট্রেডার্স, মেসার্স ইনাম হোসাইন, মেসার্স ফাহিমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জাবেদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স রাজা এজেন্সিস, মেসার্স এ আলী-পি (জেভি), মেসার্স একে সিন্ডিকেট, মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আবীর এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাঙামাটি ট্রেডার্স-এসএসই (জেভি), মেসার্স ডি আর ট্রেডিং, মেসার্স জেএন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স এসএস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স এআরএম ইঞ্জিনিয়ারিং-এমএইচএসএটি (জেভি), মেসার্স মহসিন অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স এবি হক ব্রাদার্স, মেসার্স এএন করপোরেশন, মেসার্স আকিল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাহ জব্বারিয়া ট্রেডিং, মেসার্স রাজ করপোরেশন, মেসার্স ব্রাদার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, মেসার্স আবেদীন এন্টারপ্রাইজ, এনার্জিয়েন্ট অ্যান্ড স্ট্রাক্সেল (জেভি), মেসার্স তানজিল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স ই অ্যান্ড পি (জেভি), মেসার্স এম হুদা করপোরেশন, মেসার্স মারমা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আরই-এফসি (জেভি) ও মেসার্স রিদিকা এন্টারপ্রাইজ।
অযোগ্য ঠিকাদার কাজ পাচ্ছেন বারবার: অযোগ্য ঠিকাদাররাও চসিকে কাজ পাচ্ছেন বারবার। পোর্ট কানেকটিং রোডে জাকির হোসেনের মতো একাংশের কাজ পেয়েছিল রানা বিল্ডার্সের মঈনউদ্দিন বাঁশি। ৫০ কোটি টাকার কাজ পেয়ে তিনিও মাঝপথে উধাও হয়ে যান। অথচ এই কাজ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন তিনি। পরে এই কাজ অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে সমাপ্ত করে চসিক। এ ক্ষেত্রে তাদের সাড়ে ৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়। এর পরও নগরের মহেশখালের প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ পান রানা বিল্ডার্স। সেটিও মাঝপথে রেখে পালিয়ে যান তিনি। এদিকে নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের কাজ পাওয়া নগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলমের প্রতিষ্ঠান এমবিইএল-রয়েলও (জেভি) কাজ নিয়ে ভুগিয়েছে চসিককে। এমন ঠিকাদাররা জনদুর্ভোগের কারণ হলেও চসিক নিয়ম মেনে কার্যাদেশ দিচ্ছে না।
সংশ্নিষ্টরা যা বলেন: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'পূর্বে কী হয়েছে জানি না। আমার সময়ে কোনো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আর কাউকে কাজ দেওয়া হবে না। যত বাধাই আসুক আমরা নিয়মের বাইরে যাব না।' চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, 'নিয়ম আগেও অনুসরণ করা হয়েছে। ই-জিপিতে অনিয়মের সুযোগ থাকে না। লটারিতে কাজ দেওয়া হয়। সেটাও নিয়ম মেনেই।'
ঠিকাদারদের হাতে আক্রান্ত হওয়া প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী সমকালকে বলেন, আমি প্রকল্পের দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজ পেতে অনেক ঠিকাদার তদবির করতে আসতেন। তদবির করে কাজ না পাওয়ায় তাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার দিনও তাঁরা 'আপনি কি ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি ছাড়া টেন্ডার দিবেন না' বলে হামলা চালিয়েছেন। আমি আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফিরতে চাই না। এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সুস্থ হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে চসিকের ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।"
চসিক ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু ফরহাদ চৌধুরী বলেন, 'চসিকে পাঁচ শতাধিক ঠিকাদার থাকলেও সবাই সক্রিয় নন। অল্প কিছু ঠিকাদারই নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন। আমি ৩০ বছর ধরে চসিকে কাজ করছি। বিরক্ত হয়ে মাঝখানে কিছু সময় টেন্ডারে অংশ নিইনি। যোগ্য লোককে নিয়ম মেনে কাজ দেওয়া হলে কাজের গুণগত মানও ভালো হবে।'
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি কনস্ট্রাকশন ট্রেডের মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সমকালকে বলেন, 'আগে কাজ পেতে নানা কথা শোনা গেলেও এবার তেমন কিছু শোনা যায়নি। ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিই দরপত্র মূল্যায়নের সঠিক পদ্ধতি। এখানে এককভাবে কারও প্রতিবার কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে একবার কাজ পেলে তার রেটিং কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে যাঁরা কাজ আগে পাননি, তাঁরাই পাবেন।' তবে শহীদুল ইসলাম নামে আরেক ঠিকাদার দ্বিমত পোষণ করে সমকালকে বলেন, 'ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে দরপত্র মূল্যায়ন করা হলে বড় ঠিকাদাররাই শুধু বারবার কাজ পাবেন। নতুন কিংবা ছোট ঠিকাদাররা বঞ্চিত হবেন। তাঁরা দরপত্রে অংশ নিয়ে ব্যাংক ঋণের বোঝা টানতে টানতে পেশা থেকেই হারিয়ে যাবেন।'
মন্তব্য করুন