- সারাদেশ
- কদম পাগলের মেলা ঘিরে ঘোড়দৌড় এলাকায় উৎসব
কদম পাগলের মেলা ঘিরে ঘোড়দৌড় এলাকায় উৎসব
-copy-samakal-63debf9545b2f.jpg)
মেলায় শনিবারের চিত্র - সমকাল
দল বেঁধে আসছেন তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা। শিশুরা আসছে মা-বাবার সঙ্গে। গত মঙ্গলবার থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ঘোড়দৌড় এলাকায় শুরু হওয়া কদম পাগলের মেলায় প্রতি বিকেলে দেখা যাচ্ছে এ দৃশ্য। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ছিল মেলায় উপচে পড়া ভিড়। হাজারো মানুষের কারণে কোথাও একদণ্ড দাঁড়ানোর জো নেই।
ঘর-গেরস্থালির তৈজসপত্র কিনতে আসা গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, 'এক জায়গায় অনেক কিছু পেতে হলে শহরে সুপার মার্কেটে যেতে হয়, কিন্তু মফস্বলে সে সুযোগ নেই। তাই সারা বছর এ মেলার অপেক্ষায় থাকি।' প্রতি বছর এ মেলা থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তরুণী সাবিহা কেনেন ঘর সাজানোর জন্য কৃত্রিম ফুল ও কাঠের তৈরি বাহারি ডিজাইনের শোপিস। কৃষক আলী আহমেদের হাতে ধরা ছিল জমিতে কাজের জন্য কেনা কাঁচি-কোদাল।
আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে জমে ওঠা এ মেলায় কী নেই! খাবার-দাবার, প্রসাধন সামগ্রী, শিশুদের খেলনা, ঘর-গেরস্থালির তৈজসপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি, আসবাব, বাহারি শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। এমনকি ব্লেজার, জ্যাকেট, কম্বলও নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। আয়োজক সূত্র জানায়, আগামীকাল সোমবার মেলা শেষ হলেও আসবাবপত্রের দোকান থাকবে আরও সাতদিন।
মেলার কারণে ঘোড়দৌড় এলাকা থেকে পশ্চিমে কনকসার বাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ও পূর্বে মালির অংকবাজার ছাড়িয়ে এক কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায় যানবাহনের সারি। প্রচুর মানুষের আনাগোনায় বিক্রিবাট্টাও ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। ঢাকার জিনজিরা থেকে আসা গেরস্থালির জিনিসপত্র বিক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, মেলায় কোনোদিন একটু বেচাবিক্রি কম হয়। তবে ছুটির দিনগুলোতে খুব ভালো হয়েছে।
ব্লেজার বিক্রেতা ইউসুফ আহমেদ বলেন, এখন শীতের শেষদিক হওয়ায় বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না।
শুক্রবার দেখা যায়, তরুণরা ফ্যাশনেবল ক্যাপ ও চশমার দোকানে ঢুঁ মারছে। অনেক মা-বাবাকে ছোট্ট সন্তানের জন্য ক্রিকেট খেলার ব্যাট-বল কিনে নিচ্ছেন। কেউ আবার নাগরদোলা ও নৌকাসদৃশ দোলনায় চড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। শিশুদের মিনি ট্রেন ও প্লাস্টিকের উঁচু স্লিপার থেকে পড়ে মজা করতে দেখাও যায়।
তবে সার্কাসের 'মৃত্যুকূপ' নামের খেলায় ছিল প্রচুর ভিড়। শনিবার সেখানে দেখা যায়, প্রায় ২০ ফুট উঁচু গোলাকার স্থানের খাড়া দেয়ালে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চালাচ্ছেন। এ কসরত দেখে বিমোহিত দর্শকদের মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে আসছে উচ্ছ্বাসসূচক শব্দ। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও এলাকা থেকে আসা কিশোর জহিরুল ইসলাম বলে, 'এর আগেও সার্কাস দেখেছি। কিন্তু এমন ভয়ংকর জায়গায় গাড়ি চালানো দেখিনি।'
কদম আলী মস্তানের দরবারের সামনে দেখা যায় দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের জন্য দরবার শরিফ থেকে প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনে ২ হাজার মানুষের জন্য এ ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান মেলার অন্যতম পরিচালনাকারী মনির বেপারী। তিনি আরও বলেন, মেলায় ছোট-বড় প্রায় দেড় হাজার দোকান বসেছে। নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে এসেছেন।
মন্তব্য করুন