একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. সুলতান মাহমুদ ফকির(৭০) কে ময়মনসিংহ শহরের ভাটিকাশর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪। রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সুলতান মাহমুদ ফকির ত্রিশালের বিয়ারতা গ্রামের মৃত আসমত আলী ফকিরের ছেলে।

সোমবার সকালে র‌্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান র‌্যাব - ১৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।

র‌্যাব জানায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তীতে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। এ প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা নং-০৭/২০১৮ রুজু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
 
ওই মামলায় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত তিনজন আসামি রায়ের পূর্বে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে এবং গত ২৩ জানুয়ারি মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট  ত্রিশালের কানিহারি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদকে হত্যার দায়ে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে সুলতানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়াও ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট বিয়ারতা গ্রামের নিয়ামত আলী (বর্তমানে মৃত), আজিজুর রহমান, আব্দুল মতিনকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর কুষ্টিয়া গ্রামের প্রথমখন্ড ও কালী বাজার এলাকায় ৪ সংখ্যালঘু পরিবারের উপর ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনে সরাসরি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের দায়ে মো. সুলতান মাহমুদ ফকিরকে পৃথক পৃথকভাবে আরও ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, সুলতান মাহমুদ ফকির স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে জানা যায়। ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল সুলতান। গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ এলাকা ত্যাগ করে সুলতান দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে ছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারর এড়াতে তিনি নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করতেন এবং কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। তিনি এবং তার ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ সরবরাহ করতো। আত্মগোপনে থাকাকালে তিনি সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাব - ১৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।