- সারাদেশ
- তদন্ত শেষ, ফেঁসে যাচ্ছেন মা ও বোনসহ মরিয়ম মান্নান
তদন্ত শেষ, ফেঁসে যাচ্ছেন মা ও বোনসহ মরিয়ম মান্নান

রহিমা বেগম ও মরিয়ম মান্নান। ফাইল ছবি
আলোচিত খুলনার রহিমা বেগমকে কথিত অপহরণ মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে অপহরণ নয়, বরং জমিসংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তাঁর দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরি আকতার অপহরণের এই নাটক সাজিয়েছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে। এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পিবিআইর প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই খুলনার সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
পিবিআই কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে রহিমা বেগম ও তাঁর দুই মেয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে এ মামলায় পুলিশ যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাঁরা নির্দোষ। তাঁদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
বিষয়টি নিয়ে রহিমা বেগম এবং তাঁর দুই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি। তবে মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হেলাল শরীফ, গোলাম কিবরিয়া ও তাঁর ভাই মো. মহিউদ্দিন জানান, তাঁরা রহিমা বেগমের সৎ ছেলের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। সে কারণে তাঁদের শায়েস্তায় রহিমা বেগম ও তাঁর সন্তানরা অপহরণের নাটক সাজান, যা এখন দেশবাসীর কাছে পরিস্কার। মিথ্যা মামলায় তাঁদের জেল খাটতে হয়েছে। তাঁদের দাবি, দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে যারা এই নাটক সাজিয়েছিল, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনা নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ি থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন। তাঁকে অপহরণের অভিযোগ তুলে পরদিন মেয়ে আদুরি দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী ৫ জনকে আটক করে র্যাব ও পুলিশ। তবুও রহিমার খোঁজ মিলছিল না। এক পর্যায়ে মায়ের খোঁজ দেওয়ার দাবিতে তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী মরিয়ম ও পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, পোস্টারিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মাকে ফিরে পেতে মরিয়মের আহাজারি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এক পর্যায়ে ২২ আগস্ট মরিয়ম ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা পুলিশ তাঁর মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরদিন ফুলপুর থানায় গিয়ে মরদেহটি তাঁর মায়ের বলে শনাক্তও করেন মরিয়ম। কিন্তু ২৪ সেপ্টেম্বর খুলনার দৌলতপুর থানা পুলিশ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা রহিমাকে উদ্ধার করে। কয়েক বছর আগে কুদ্দুস খুলনায় রহিমার বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন।
তদন্তের বরাত দিয়ে পিবিআই সুপার মুশফিকুর রহমান জানান, রহিমা বেগম ২৭ আগস্ট রাতে তাঁর তৃতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদারের সহযোগিতায় ঢাকায় চলে যান। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকায় মেয়ে মরিয়মের কাছে ছিলেন। এর পর ৬ সেপ্টেম্বর চলে যান বান্দরবান। ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বান্দরবানে তিনি রিজিয়া বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে ছিলেন। ১২ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একই এলাকার মনি বেগমের ভাতের হোটেলে কাজ নেন এবং তাঁর বাড়িতেই থাকেন। পরে একটি অফিসে কাজের জন্য গেলে তাঁরা রহিমার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন চান। এতে ভিত হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ভুয়া নাম এবং বাড়ি বাগেরহাট উল্লেখ করে জন্মনিবন্ধনেরও চেষ্টা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত রহিমা বোয়ালমারীতে ছিলেন।
মন্তব্য করুন