- সারাদেশ
- পুলিশের ‘গাফিলতিতে’ সেই ব্যবসায়ীর মৃত্যু, ২ কর্মকর্তা সাসপেন্ড
পুলিশের ‘গাফিলতিতে’ সেই ব্যবসায়ীর মৃত্যু, ২ কর্মকর্তা সাসপেন্ড

ফাইল ছবি
ধরে আনার পর থানায় আটকে রেখে নির্যাতনে নয় বরং পুলিশের গাফিলতিতে গাজীপুরের সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে ধরে আনার সময় রবিউলের কাছে পুলিশ কোনো মাদক পেয়েছিল কিনা তিন সদস্যের কমিটি সেটা স্পষ্ট করতে পারেনি।
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় বাসন থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফেরার পথে গভীর রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘কোনোভাবেই পুলিশ এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। এতে পুলিশের প্রশাসনিক দুর্বলতাও রয়েছে।’
জিএমপি সদর দপ্তরে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জানুয়ারি রবিউলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরপরই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৮৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন কমিটির সদস্যরা। প্রায় দুই সপ্তাহ তদন্ত শেষে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন ও কমিটির সুপারিশ আইজিপির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
রবিউলের মৃত্যুর জন্য মহানগরের বাসন থানা পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তাঁকে ধরে আনার আগে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়নি। রাতের আঁধারে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর কেন পুলিশ নিজ দায়িত্বে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়নি? এভাবে কেন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলো? তাছাড়া বাসন থানা এলাকায় সরকারি খরচে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে আছে, সেটা মেরামত করা হয়নি কেন?’
প্রতিবেদনে এসব কিছুর জন্য বাসন থানার সে সময়ের ওসি মালেক খসরু খানের প্রশাসনিক দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়েছে। কমিশনার বলেন, ‘এটা নিশ্চত হওয়া গেছে, পুলিশ হেফাজতে রবিউলের মৃত্যু হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ডেথ সার্টিফিকেটে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহত রবিউলের পরিবারের কোনো সদস্যেরও এ নিয়ে অভিযোগ নেই। রবিউলকে ধরে থানায় আনা দুই এএসআই মাহবুবুর ও নূরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হেেয়ছে।’
রংপুরের পীরগঞ্জ থানার শাহাদাতপুর গ্রামের রবিউল ভোগড়া বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। দুই কন্যাসন্তানের জনক রবিউল সুতার ব্যবসা ও স্ত্রী নূপুর আক্তার পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতেন।
গত ১৫ জানুয়ারি অনলাইনে জুয়া ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে রবিউলকে বাসা থেকে ধরে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যান এএসআই মাহবুব ও নূরুল। তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁরা ৩৫ হাজার টাকা আদায় করে। চার দিন থানার ভেতরে আটকে রাখার পর রবিউলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশ হেফাজতে রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে মহাসড়কে নেমে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে গাজীপুর মহানগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড়ে তাঁরা যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেন। পুলিশকে মারধর ছাড়াও চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলে। প্রথম দিকে স্বজনরা পুলিশের নির্যাতনে রবিউলের মৃত্যুর অভিযোগ করলেও পরবর্তী সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়ার তথ্য দেন।
এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল সোমবার সেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনসহ সুপারিশ দাখিল করে।
ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের দুই মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। এখনও কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। তদন্ত শেষে এ মামলা নিয়ে কথা বলা যাবে।’
মন্তব্য করুন