জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য মাদকদ্রব্য পরিবহনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৬ জানুয়ারি মাদক নিয়ে আসার সময় সাভারে অ্যাম্বুলেন্সটির ধাক্কায় আব্দুল কুদ্দুস (৩০) নামে এক অটোরিকশাচালক নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা এক নারী সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনায় তাঁর গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ কারণে ঘটনার ১১ দিন পর গতকাল সোমবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হক দুর্ঘটনার বিষয়টি গতকাল সমকালকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অটোরিকশাচালক পটুয়াখালীর কাউখালী উপজেলার কোনাহোড়া এলাকার আব্দুল মজিদ শিকদারের ছেলে। তিনি সাভারের কলমা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার পরদিন ছিল জাবির মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানের জন্য মাদকদ্রব্য আনতে অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাবির পরিবহন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান। অ্যাম্বুলেন্সে মাদক ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, হ্যাঁ মাদকদ্রব্য। দুর্ঘটনার সময় মওলানা ভাসানী হলের ছাত্ররা গাড়িটি ব্যবহার করছিল।'
সরেজমিন দেখা যায়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেট্রো ছ-৭১-৪৫৪৫ লাইসেন্স নম্বরের গাড়িটির সামনের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামনের গ্লাসও ভেঙে গেছে। দুর্ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চালক রিপন হাওলাদার অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ব্যবহূত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী ও উপ-অর্থ সম্পাদক আহসান হাবিব ইমন। তাঁরাও আহত হয়েছেন। রিফাত চৌধুরী বলেন, সে দিন দুর্ঘটনার সময় আমিও গুরুতর আহত হই। আমার সঙ্গে ৪৬ ব্যাচের ইমন ছিল। তবে মাদকদ্রব্যের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আগে মাদকদ্রব্য পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ঘটনা নতুন নয়। অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে পুলিশের সন্দেহ না থাকায় এর সুযোগ নেন এক শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টি না জানার কথা নয়। তাঁরা জানান, ৪৩ ব্যাচের র?্যাগের অনুষ্ঠানের জন্য মাদক নিয়ে আসার সময় গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়ি বংশাল থানা পুলিশ আটক করে। পরে সেটি ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।

এদিকে ঘটনাটি শুরু থেকেই ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভারের এক পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ঘটনা তদন্তে ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান সাভার হাইওয়ে থানার এসআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুল। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের 'অসহযোগিতা' করা হয়। এ সময় জাবি প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। 

তবে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুনর্মিলনীর দিন কে কীভাবে গাড়ি নিয়েছে, সেটা ঠিক জানি না। তবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন রাষ্ট্রীয় আইনে যা হয় সেটাই হবে। আর দুর্ঘটনা ঘটেছে, এটা ধামাচাপা দেওয়ার কিছু নেই। পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অটোরিকশাচালক কুদ্দুসের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপমৃত্যু মামলার তদন্ত চলছে। দুর্ঘটনাকবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি শনাক্ত করতে পেরেছি। এটি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছি।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি।



বিষয় : 'মাদক বহনকালে' দুর্ঘটনায় জাবির অ্যাম্বুলেন্স

মন্তব্য করুন