তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের আশঙ্কা করছে তুরস্কের বাংলাদেশ দূতাবাস। ইউরোপে প্রবেশে বাংলাদেশিরা এ রুট ব্যবহার করে থাকেন- এমন ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পায়নি দূতাবাস। তবে গোলাম সাঈদ রিংকু নামের এক বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়ার যে অংশে ভূমিকম্পটি সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে, সেখানে মূলত মানব পাচারকারীরা তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বছরের যে কোনো সময়ে এ স্থানে কমপক্ষে ১০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন। কোনো কোনো সময় এ সংখ্যা আরও বেশি হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, এখনও কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আর পূর্ণাঙ্গ উদ্ধার অভিযান চালানো না হলে এখানকার কোন দেশি কত নাগরিক হতাহত হয়েছেন, তার বিস্তারিত পাওয়া যাবে না। এখানে অবস্থান করা সব বাংলাদেশি যেহেতু অনিবন্ধিত, ফলে তাঁরা নিহত হলেও খোঁজ পাওয়া কষ্টসাধ্য। এ রুট ব্যবহার করে যাওয়া বাংলাদেশিরা দেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে দূতাবাসের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেন না।

ইউরোপে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশিরা সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) অথবা ভারত হয়ে সিরিয়া, লিবিয়া ও তুরস্কের রুট ব্যবহার করে থাকেন। তুরস্ক প্রায়ই দেশটিতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের জন্য ঢাকাকে অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশির সংখ্যা ৮০০ থেকে ১০০০ হলে তাঁদের ফেরাতে চাপ দেয় দেশটি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেহেতু নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনে; ফলে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে তুরস্ক আটক বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেয় এবং সীমান্ত দিয়ে অন্য দেশে পাঠায়। তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় সিরিয়ার দিকে বেশিরভাগ বাংলাদেশি লুকিয়ে থাকেন অথবা অপহরণকারীদের হাতে আটক হন।

গতকাল সোমবার রাতে তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত শাহনাজ গাজী সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চল গাজিয়ান্তেপ, যেখানে ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে, সেখানে থাকা সব বাংলাদেশিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় অবৈধ পথে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুরস্ক ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো মানব পাচারকারীরা ইউরোপে পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ফলে এখানে কোনো বাংলাদেশি রয়েছেন কিনা, তা দূতাবাসের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে এ সীমান্তে বাংলাদেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ কূটনীতিক।

গতকাল সন্ধ্যায় তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, গোলাম সাঈদ রিংকু নামের এক বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি যে ভবনটিতে বসবাস করতেন, সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরেও প্রায় ৫০ বাংলাদেশি বসবাস করেন।

তুরস্ক বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষক শর্মিলি আনোয়ার সমকালকে বলেন, গোলাম সাঈদ রিংকু ও নূরে আলম নামের দুই বাংলাদেশি একই ভবনে এক ঘরে থাকতেন। প্রথমে দু'জনই নিখোঁজ ছিলেন। পরে নূরে আলমের খোঁজ পাওয়া যায়। নূরে আলম জানান, ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনি বের হয়ে আসতে পারলেও গোলাম সাঈদ রিংকু সেখান থেকে বের হতে পারেননি।

সিরিয়ার যে অঞ্চলটিতে ভূমিকম্প আঘাত করেছে, সে জায়গা একই সঙ্গে সরকার ও বিদ্রোহী দলের দখল রয়েছে। বিদ্রোহী দলগুলো মূলত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। ফলে এখানে উদ্ধার অভিযান চালানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

তাঁদেরই একজন বলেন, এখানে বাংলাদেশি থাকলেও কিছু জানা যাবে না। কারণ হয় বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখানে লুকিয়ে থাকেন অথবা আটক থাকেন। তাঁদের বেশিরভাগের সঙ্গেই পাসপোর্ট থাকে না।

বিষয় : অনেক বাংলাদেশিও হতাহতের শঙ্কায় একজন নিখোঁজ

মন্তব্য করুন