- সারাদেশ
- দেরিতে হলেও বুঝেছেন তাঁরা ছিলেন ভুল পথে
দেরিতে হলেও বুঝেছেন তাঁরা ছিলেন ভুল পথে
ইউএনওর উদ্যোগে মাদক ছেড়েছেন দৌলতপুরের ১৩৯ জন
পথটা নিষিদ্ধ। তবু অল্প পরিশ্রমে মেলে বিপুল অঙ্কের লাভ। সচ্ছলতার আশায় তাই মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েন সীমান্ত এলাকার লোকজন। তবে লাভের লোভ স্বস্তি দেয় না কাউকেই। বেচাকেনা করতে করতে নিজেই মাদকসেবী হয়ে পড়েন অনেকে। সেই নেশাদ্রব্য জোগাড় করতে গিয়ে হারাতে হয় সর্বস্ব। পারিবারিক কলহ হয়ে ওঠে নিত্যদিনের ঘটনা। মৃত্যু ধেয়ে আসে অকালে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথেও ঘুরতে হয়। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোর অনেক ঘরেই এমন চিত্র।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর দিশা পাচ্ছেন তরুণ-যুবারা। উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কয়েক মাসে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ১৩৯ মাদকাসক্ত ব্যক্তি। বিষয়টি পুরো এলাকায় আলোড়ন তৈরি করেছে।
সীমান্তঘেঁষা জামালপুরের বাসিন্দা লালু মণ্ডল। দীর্ঘদিন ধরে মাদকের কেনাবেচা করতেন। পরে আসক্ত হয়ে সব হারিয়েছেন তিনি। পরিবারও হয়েছে ছিন্নভিন্ন। লালু মণ্ডল বলেন, দেরিতে হলেও তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বারের সহায়তায় তিন মাস আগে মাদক ছাড়েন। এখন ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। জীবিকার জন্য ভ্যান চালাচ্ছেন লালু।
দৌলতপুর উপজেলার ৪২ কিলোমিটার পড়েছে ভারতের সীমানায়। বিস্তৃত এ এলাকায় হাত বাড়ালেই মেলে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন। মাদকের সহজলভ্যতায় সীমান্ত এলাকার পরিবারগুলোতে কলহ লেগেই থাকে। হত্যা, মারামারি, অশান্তি প্রতিদিনের ঘটনা। প্রায়ই ঘটে বিবাহ বিচ্ছেদ। মাদকাসক্ত সন্তানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মা-বাবা প্রায়ই সুবিচারের ফরিয়াদ নিয়ে যান ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ইউএনও আব্দুল জব্বারকে। তিনি আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি ভিন্ন কিছু ভাবেন। চিন্তা করেন কীভাবে মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়- এ নিয়ে। মাদক রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে সভাসহ আয়োজন করেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পথসভা, সংগীতের। এর সাফল্যও মিলছে হাতেনাতে। কয়েক মাসে ১৩৯ মাদকাসক্ত ব্যক্তি ফেরেন স্বাভাবিক জীবনে।
তাঁদের মধ্যে বিলগাথুয়া গ্রামের ইমাজ, রাজীব ও রাকিবুলের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তাঁরা বলেন, অশান্তির জীবন ছেড়েছেন। পরিবার নিয়ে বাকি জীবন শান্তিতে কাটাতে চান।
ইউএনও আব্দুল জব্বার বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে মাদকাসক্ত বহু পরিবারের আকুতি দেখেছেন। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সবার সহায়তায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন।
গ্রাম পুলিশ সদস্য বা যে কোনো ব্যক্তি মাদকের সঠিক তথ্য দিলে, তাঁদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন ইউএনও।
মন্তব্য করুন